চন্দন মাইতি। নিজস্ব চিত্র
গাঁয়ের মানুষজনের বাড়ি ঘুরে ঘুরে খোঁজ-খবর করা রোজকার অভ্যাস চন্দন মাইতির। মঙ্গলবার সকালেই বেরিয়ে পড়েছিলেন মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দনবাবু। গ্রামের একটি বাড়িতে প্যান্ডেল দেখে মনে হয়, কিসের অনুষ্ঠান, দেখে আসি। খোঁজ নিয়ে স্তম্ভিত তিনি। জানতে পারেন, বাড়ির নাবালিকা মেয়েটি তাঁরই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। তার বিয়ের তোড়জোড় চলছে।
খবর পেয়েই মেয়েটির কয়েকজন সহপাঠীকে ডেকে নেন প্রধান শিক্ষক। কয়েকজন শিক্ষককেও আসতে বলেন। সদলবলে চন্দনবাবুরা হাজির হন মেয়েটির বাড়িতে। হাঁকাহাঁকিতে লোকজন বেরিয়ে আসেন বাইরে। আসে মেয়েটিও।
খানিক দূর কথাবার্তা এগোনোর পরে সেই মেয়েটিও স্যারকে বলে, ‘‘আমি পড়তে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আমার বিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা করুন।’’
মথুরাপুরের লালপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ছাত্রীর বাবা আনাজ বিক্রেতা। পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে মেজোটিরই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করছিল পরিবার। মঙ্গলবারই ছিল বিয়ে।
প্রধান শিক্ষক মেয়েটির বাবাকে ডেকে বোঝান, এই বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া অপরাধ। মেয়ের নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। অনেক বোঝানোর পরে পরিবারের লোকজন বিয়ে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। মেয়েটির বাবা বলেন, ‘‘অভাবের সংসার। ভাল পাত্র পেয়েছিলাম। তাই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। কিন্তু আঠারো বছর বয়স না হলে বিয়ে দেওয়া যে অপরাধ, জানতাম না।’’
চন্দনবাবু বলেন, ‘‘ও আমাদের স্কুলের একজন কৃতী ছাত্রী। কন্যাশ্রী পাচ্ছে। কেন পড়বে না? পড়াশোনা করে ও আরও বড় হোক।’’ ওই ছাত্রী ও তার বোনকে হস্টেলে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পড়াশোনার দায়িত্ব স্কুলই বহন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
সহপাঠিনীর বিয়ে রুখে দিতে পেরে মনে বল পাচ্ছে ক্লাসের বাকিরাও। তাদের এখন একটাই কথা, ‘‘কোথাও কোনও নাবালিকা বিয়ের খবর পেলে এ বার রুখে দেব আমরাই।’’