ঠেকনা: শালখুঁটি দিয়ে এ ভাবেই হয়েছে অস্থায়ী বাঁধ। —নিজস্ব চিত্র।
খড়দহের ক্যাম্প ঘাট ও বাবাজী ঘাট এলাকার গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা সামান্য হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিন দিন পরে। গঙ্গার ভাঙন থেকে তাঁদের বাড়িঘর বাঁচাতে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি শুরু হল বুধবার। যদিও পুরো কাজের প্রস্তুতি-পর্ব সারতেই সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। ফলে রাতে আবার নতুন করে ভাঙন শুরু হবে কি না, সেই আশঙ্কাও রয়ে গিয়েছে।
এ দিন সকালে পুরসভার প্রতিনিধিরা ক্যাম্প ঘাট এলাকায় যান বাঁধ তৈরির কাজ পর্যবেক্ষণ করতে। কথা বলেন বাসিন্দাদের সঙ্গে। দুপুরে সেচ দফতর থেকে বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে বলা হয়, এ দিনই কাজ শুরু হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থেকে পৌঁছে গিয়েছিলেন শ্রমিকেরাও। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই গঙ্গায় বান আসায় ফের আতঙ্ক ছড়ায়। জল ঢুকতে থাকে ক্যাম্প ঘাট সংলগ্ন অঞ্চলে। বাঁধের ভাঙা অংশের মাটিও খসতে থাকে। শ্রমিকেরা ভয় পাচ্ছিলেন, এর মধ্যে কাজ করলে জলের তোড়ে খুঁটি উপড়ে যাবে। শেষমেশ বাঁশ ও শাল খুঁটি দিয়ে কপিকলের মতো একটি কাঠামো তৈরি করেন শ্রমিকেরা। সন্ধ্যার পরে জলের টান একটু কমলে ওই কপিকল দিয়ে শাল খুঁটি নামানোর কাজ শুরু হয়।
দুপুর থেকে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি ছিল বাসিন্দাদের চোখেমুখে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত গঙ্গায় প্রবল স্রোত থাকায় কাজ বিশেষ এগোয়নি। ফলে আবারও একটা রাত বিনিদ্র কাটানোর পাশাপাশি নতুন করে অঘটনের ভয় তাড়া করছে তাঁদের। সেচ দফতর থেকে জানানো হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার সকালে ভাটার সময়ে খুঁটি পোঁতা হবে।
রবিবার রাত থেকেই ক্যাম্প ঘাট ও বাবাজী ঘাটের মধ্যবর্তী অংশে গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়। জলের তোড়ে গঙ্গায় খসে পড়তে থাকে পাড়ের ইট ও মাটি। পুরসভার তরফ থেকে নোটিস পাঠিয়ে বাসিন্দাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, ঘর ছাড়তে হবে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পরেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার অস্থায়ী বাঁধের সরঞ্জাম এলেও শ্রমিকেরা না আসায় কাজ শুরু করা যায়নি। পাশাপাশি গঙ্গার জলও ক্রমশ বাড়তে থাকায় সেচ দফতরের পক্ষেও কাজ শুরু করায় সমস্যার কথা জানানো হয়। সেই রাতও বিনিদ্রই কেটেছিল বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা, বৃদ্ধা রেণুকা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গঙ্গা যেন ফুলে-ফেঁপে উঠছে। তার মধ্যে আবার বৃষ্টি। রোজ রোজ কি আর ভয় বুকে চেপে বাঁচা যায়? কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শুধু ঈশ্বরকে ডাকছি।’’