সচেতন: ডেঙ্গি নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন এলাকার কাউন্সিলর। নিজস্ব চিত্র
এতদিন পাড়ায় পাড়ায় তাঁদের সে ভাবে দেখা যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ উঠছিল। মন্ত্রীর ধমক খেয়ে ডেঙ্গি রোধে বৃহস্পতিবার পথে নামলেন হাবরার তৃণমূল কাউন্সিলররা।
প্রায় দু’মাস ধরে জ্বরের দাপট অব্যাহত হাবরা শহরে। ইতিমধ্যে পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। পুরসভার পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা জ্বর-ডেঙ্গি রোধে চুন, ব্লিচিং ছড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে সচেতনও করছেন। কিন্তু কাউন্সিলরদের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল। বুধবার জ্বর-ডেঙ্গি নিয়ে বৈঠকে দলীয় কাউন্সিলরদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তার পরেই বৃহস্পতিবার দেখা গেল, ওই কাউন্সিলররা সরাসরি বাড়ি বাড়ি দিয়ে ডেঙ্গি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন! তাঁদের নির্দেশে সাফাই অফিযান চলছে!
যা দেখে সাধারণ মানুষ খুশি। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা মনে করছেন, দেরিতে ঘুম ভাঙল কাউন্সিলরদের। আগে থেকে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হলে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ হতো না। মৃত্যুও হয়তো এড়ানো যেত। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বিশিষ্ট লোকজনকে নিয়ে ১০ জনের দল তৈরি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্নাঘর থেকে জলের ট্যাঙ্ক— সব জায়গা দেখতে। জল যেন জমে না-থাকে। বাড়ির লোকজনের সইও করিয়ে নিতে হবে।’’
হাবরা পুরসভার মোট আসন ২৪। তিন জন কাউন্সিলর মারা গিয়েছেন। ২১ জনের মধ্যে তৃণমূলের রয়েছেন ১৪ জন। বৃহস্পতিবার সকলেই পথে নামেন। কাউকে দেখা গেল, জ্বরে আক্রান্তের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে। কেউ লিফলেট বিলি করলেন। কেউ আবার বন-জঙ্গল সাফাই এবং নালা পরিষ্কারের কাজের তদারক করলেন। অনেকেরই দাবি, তাঁরা যে কিছু করছিলেন না, এমন নয়। পুরসভার পক্ষ থেকে তাঁরা নিজেদের ওয়ার্ডে জ্বর-ডেঙ্গি রোধের কাজ দেখভাল করছিলেন।
পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘এই বিশেষ অভিযান ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন ১৫ জন সাফাই কর্মী প্রতিটি ওয়ার্ডে জঙ্গল সাফাই এবং জমা জল পরিষ্কারের কাজ করবেন। এ জন্য অস্থায়ী ভাবে অতিরিক্ত ৩৬০ জন কর্মী নেওয়া হয়েছে। পুরসভার তরফে মাত্র ৩২৫ টাকার বিনিময়ে রক্তের এনএস-১ পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
মন্ত্রীর ধমকে না হয় তৃণমূল কাউন্সিলররা পথে নামলেন। কিন্তু বাম কাউন্সিলররা কী করবেন?
সিপিএমের দাবি, তাঁদের কাউন্সিলররা বেশ কিছুদিন ধরেই ওই কাজ করছেন। একই সঙ্গে সিপিএমের অভিযোগ, পুরসভার সাহায্য না পেলে সব কাজ করা সম্ভব নয়। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দত্তের অভিযোগ, ‘‘মন্ত্রী দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করলেন। এর আগে পুরপ্রধানও করেছেন। কিন্তু আমাদের ডাকা হয়নি। কোনও সহযোগিতা পাচ্ছি না।’’ অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধানের দাবি, ওই কাউন্সিলররাই কোনও বৈঠকে আসেন না।
তবে, পুর এলাকার বাসিন্দারা চান, কাজিয়া সরিয়ে রেখে সকলে একযোগে জ্বর-ডেঙ্গি মোকাবিলায় সামিল হোন।