Police

শিরদাঁড়া সোজা রেখেছে পুলিশ, চর্চা দিনভর 

পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা শোনা গেল এলাকার সাংসদের মুখে। আর এই সবের পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার দিনভর পুলিশ মহলে আলোচনার কেন্দ্রে থাকল খড়দহ থানার আইসি এবং ব্যারাকপুরের সহকারী নগরপালের ভূমিকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:৩৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যের শাসক দলের দুই পুরপ্রতিনিধির মধ্যে কাজিয়ায় প্রাণ গিয়েছে এক তৃণমূলকর্মীর। আকাশ প্রসাদ নামে ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই মূল অভিযুক্ত অর্জুন জায়সওয়াল এবং রোহিত সাউকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা শোনা গেল এলাকার সাংসদের মুখে। আর এই সবের পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার দিনভর পুলিশ মহলে আলোচনার কেন্দ্রে থাকল খড়দহ থানার আইসি এবং ব্যারাকপুরের সহকারী নগরপালের (এসিপি) ভূমিকা। শোনা গেল, ‘শিরদাঁড়া সোজা করে চলতে হবে এ বার’ জাতীয় চর্চাও।

এই ঘটনায় আইসি রাজকুমার সরকারের ভূমিকায় উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন ও বর্তমান পুলিশ আধিকারিকদের অনেকেই। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় আইসি-র ভূমিকা নজর কেড়েছে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহেরও। এ দিন অর্জুন বলেন, ‘‘দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সংগঠনের রাশ তো আমিও সামলেছি। এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি, এখন যা দেখতে হচ্ছে। পুলিশ কী করবে? দুই কাউন্সিলরের কেউ কম যান না। খড়দহের আইসিকে বহু দিন ধরে চিনি। সিবিআইয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। শিরদাঁড়া সোজা করে চলতে জানেন।’’ যদিও কিছু দিন আগে ব্যারাকপুরে সোনার দোকানে ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এই অর্জুনই। তবে পুলিশকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধী সিপিএম।

এ দিন সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, টিটাগড়ের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সোনু সাউকে চড়া সুরে নিজেদের দায়িত্ব বোঝাচ্ছেন খড়দহ থানার আইসি রাজকুমার সরকার ও ব্যারাকপুরের এসিপি আবুনুর হোসেইন। সোনু চিৎকার করে বলেন, ‘‘আপনি এসে আমাকে ধমকাবেন, তা ঠিক নয়। ক্রাইম করছিল এক জন, মেয়াদ ফুরোনোর পরেও বাড়ি ছাড়ছিল না। তাই তালা লাগিয়ে এসেছিলাম। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে বাড়িওয়ালা ডাকবে না?’’ আইসি ধমকে তাঁকে সতর্ক করেন, ‘‘তোমার ধমক শোনার জন্য বসে নেই আমি। তোমার মতো ৪৪ খানা কাউন্সিলর আছে আমার। কাউন্সিলর হয়ে মারামারি করছ নির্লজ্জের মতো! নিজে জনপ্রতিনিধি বলছ তো তুমি, জনপ্রতিনিধি। এটা ভাবো, তুমি পাড়ার গুন্ডা নও।’’ বহু ক্ষণ সোনুর চেঁচামেচি শোনার পরে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে এসিপি আবুনুরেরও। তিনিও ধমকে ওঠেন, ‘‘জনপ্রতিনিধি বলে আপনাকে কে অধিকার দিয়েছে কারও ঘরে তালা দেওয়ার? পাড়ার মোড়ল হয়ে গিয়েছেন?’’ প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকদের অনেকেই এই ভিডিয়ো নিজেদের সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। তাঁদেরই এক জন সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজকুমার যা করেছে, তাতে পুলিশ হিসেবে গর্বিত হওয়ার কথা।’’

টিটাগড়ের ১৫ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দুই তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি সোনু সাউ এবং বিকাশ সিংহের মধ্যে তোলাবাজি নিয়ে মারামারির অভিযোগ করছেন স্থানীয়েরাও। বাড়ি ভাড়া, দোকান বসানো থেকে কল সেন্টার চালানো— বিভিন্ন ভাবে তোলা আদায়ের অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়তে শুরু করেছে। রবিবার খড়দহ থানার পুরানি বাজার এলাকায় বিকাশের গোষ্ঠীর দু’জনকে রড, বাঁশ, হকি স্টিক ও উইকেট দিয়ে পেটায় সোনুর অনুগামীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় আকাশকে। আহত রৌনক পাণ্ডেও বলেন, ‘‘আমরা মার খেয়েছি, আকাশ আমাকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেল। কিন্তু এ ঘটনা আগেও বহু বার হয়েছে।’’

প্রশ্ন উঠছে এই সূত্রেও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘টিটাগড় পুরসভায় তৃণমূল কাউন্সিলরদের দুই গোষ্ঠীর লড়াই। কোন গোষ্ঠীর পক্ষে পুলিশ থাকবে? সেই কারণে পুলিশকে যখন ধমকাচ্ছে, চাপ সৃষ্টি করছে, তখন তারাও নীতি-কথা শুনিয়েছে। কিন্তু ওই নীতি-কথা পুলিশই কখনও মানেনি। কাউন্সিলর আঙুল তুলে কথা বলছে, আইসি-ও। আর তৃণমূলকে তো চালাচ্ছে পুলিশ।’’

মৃত আকাশ প্রসাদের মা শকুন্তলা দেবী বলেন, ‘‘ছেলেকে যারা পিটিয়ে খুন করেছে, তাদের ফাঁসি চাই।’’ তৃণমূলের দমদম-ব্যারাকপুর জেলা সভাপতি তাপস রায় বলেন, ‘‘ঘটনা সম্পর্কে দুই কাউন্সিলরের সঙ্গেই কথা বলতে হবে। যে অভিযোগ উঠছে, তা দলের কর্মী বা জনপ্রতিনিধিদের কাজ নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন