এখন সুস্থ ওঁরা
গত কয়েক দিনে বাসন্তী ব্লকে প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। সপরিবার আক্রান্ত হয়েছিলেন রাধাবল্লভপুরের বাসিন্দা বছর পঁচাশির রঞ্জিত রায়। গত ১৪ জুলাই প্রথমে তাঁর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তাঁর বাহাত্তর বছরের স্ত্রী ও ছেলে-বৌমার লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠায় বাসন্তী ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। তিনজনেরই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। দিন দশেক চিকিৎসার পরে অবশ্য সকলেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
বাসন্তী ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথমে রঞ্জিত জ্বর ও সর্দি, কাশি নিয়ে ভুগছিলেন। বিষয়টি ব্লক স্বাস্থ্য দফতর জানতে পেরেই তাঁর লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠায়। সেই রিপোর্ট পজিটিভ আসতেই তাঁকে ক্যানিং কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। পরদিনই স্ত্রী মায়া একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁরও লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। স্বামীর পর স্ত্রী ও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক। তাঁকে ও ক্যানিং কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
অন্য দিকে, ছেলে পার্থ ও বৌমা মিতালির শরীরে কোনও উপসর্গ না থাকলেও তাঁদের লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রিপোর্টে দেখা যায় তাঁরাও আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাঁরা উপসর্গহীন হওয়ায় বাড়িতেই চিকিৎসকদের নির্দেশিকা মেনে চলতে বলা হয়।
দিন দশেক চিকিৎসার পরে সকলেই সুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। দিন তিনেক আগে বৃদ্ধ দম্পতিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কোভিড হাসপাতাল থেকে। রঞ্জিত বলেন, ‘‘প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরিবারের সকলেই একে একে আক্রান্ত হওয়ায় চিন্তা হচ্ছিল। কিন্তু ডাক্তারবাবুরা বার বার অভয় দিয়েছেন। এখন আমরা সকলেই সুস্থ হয়েছি।”
বাসন্তীর বিরাশি বছরের বৃদ্ধা কৃষ্ণা কুণ্ডুও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ক্যানিং কোভিড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ন’দিন চিকিৎসার পরে দিন দু’য়েক আগে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে তিনিও বাড়ি ফিরেছেন। কৃষ্ণা বলেন, “যে ভাবে চারিদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর শুনেছিলাম, তাতে বেঁচে ফিরব ভাবিনি। কিন্তু ডাক্তারবাবু, নার্সদের সেবায় আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছি। ওঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ।”
বাসন্তীর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৈকত বেরা বলেন, “আমরা সাধ্য মতো আক্রান্তদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছি প্রতিনিয়ত। করোনায় আক্রান্ত হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বহু মানুষই দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। মনের জোর থাকলেই দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।”
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)