‘ড্রপ-আউট’ রুখতে জোর ‘মাইক্রো প্ল্যানিং’য়ে
Child Labour

শিশুশ্রমিক বৃদ্ধির আশঙ্কা

জেলায় ৫১টি সার্কেলের অন্তর্গত প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ‘ভিডিয়ো কনফারেন্স’ করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) প্রদ্যোৎ সরকার।

Advertisement

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৫২
Share:

প্রতীকী চিত্র।

স্কুলের সঙ্গে সম্পর্ক লাটে উঠেছে অনেক আগেই। লকডাউনে কাজ নেই বাবা বা পরিবারের কর্তার। ঘরে স্মার্ট ফোন-ও নেই যে অনলাইনে পড়াশোনা করা যাবে।

Advertisement

প্রেক্ষিতটা যখন এ রকম, তখন স্কুলে ‘ড্রপ-আউট’-এর হার যে বাড়বে, এমন শঙ্কা থাকাই স্বাভাবিক। আর সেই আশঙ্কা যাতে সত্য না-হয়, তার জন্য এ বার স্থানীয় স্তরে পরিকল্পনা (মাইক্রো প্ল্যানিং) করে পড়ুয়াদের সঙ্গে স্কুলের সম্পর্ক ধরে রাখতে পদক্ষেপ করছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা শিক্ষা দফতর।

জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, জেলায় ৫১টি সার্কেলের অন্তর্গত প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ‘ভিডিয়ো কনফারেন্স’ করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) প্রদ্যোৎ সরকার। সেখানে স্কুলের সঙ্গে পড়ুয়াদের সম্পর্ক কী করে ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ‘মাইক্রো প্ল্যান’ তৈরির কথা বলেছেন প্রদ্যোৎবাবু।

Advertisement

কেন এই পদক্ষেপ? তবে কি ‘ড্রপ আউট’-এর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে?

শঙ্কা গোপন করেননি প্রদ্যোৎবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এই আশঙ্কা সব সময়েই থাকে। সেই জন্যই জেলার সবক’টি সার্কেলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেছি। এই পয়েন্টটি (ড্রপ-আউট) বিশেষ করে আলোচনা হয়েছে। মাইক্রো প্ল্যানিং করতে বলা হয়েছে, যাতে প্রত্যেক স্কুলের প্রতিটি ছাত্রকে তাঁরা ধরে রাখতে পারেন।’’

এই মাইক্রো প্ল্যানিং স্কুল ভেদে বিভিন্নরকম হতে পারে। ছাত্রদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখার উপরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দাবি, ‘‘প্রত্যেক স্কুলই ছাত্রদের ধরে রাখতে নিজেদের মতো করে কিছু পদক্ষেপ করেছে।’’ সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন, অনেক শিক্ষকই এখন বাইরে। ১০০ শতাংশ ছাত্রের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখার মতো পরিকাঠামো-ও সব স্কুলে নেই।’’

করোনা-পরিস্থিতিতে জন্ম নিয়েছে আরও এক আশঙ্কা।

জেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘গরিব পরিবারের ছাত্ররা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লকডাউনে। তাদের পরিবারের আয় শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে। নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে পড়াশোনা ছেড়ে কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। আশঙ্কা সত্য হলে শিশুশ্রমিক বাড়বে। কন্যাশ্রী প্রকল্প থাকায় ছাত্রীরা পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। কিন্তু ছাত্রদের মধ্যে ড্রপআউট বাড়তে পারে।’’

এই অবস্থায় করণীয় কী?

একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়েছে, জেলা স্তর থেকে একটা পরিকল্পনা করে দেওয়া হবে। বাংলার শিক্ষা পোর্টালে কিছু অ্যাকটিভিটি টাস্ক দেওয়া হবে। টেলিফোনে পড়ানোর কথাও বলা হচ্ছে। ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে, যাতে পড়ুয়ারা (যাদের ঘরে স্মার্ট ফোন নেই) প্রয়োজনে ফোন করে পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে।’’

উস্তির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘প্রত্যেক ক্লাসের পড়ুয়া এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে হোয়াটস্‌অ্যাপ-গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। সেই গ্রুপের মাধ্যমে পড়াশোনা চালানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে সব পড়ুয়ার কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। খুব বেশি হলে ২০-৩০ শতাংশ পড়ুয়ার কাছে পৌঁছনো গিয়েছে।’’

জেলার প্রান্তিক একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁর স্কুলের পড়ুয়াদের ধরে রাখতে ভিন্ন এক পন্থা নিয়েছেন। শিক্ষা দফতরের এক জন বলেন, ‘‘ওই স্কুলের পড়িয়ারা যে সব গ্রাম থেকে আসেন, সেই গ্রামগুলির কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ওই স্কুলের শিক্ষকেরা। ওই অভিভাবকদের মাধ্যমে সেই সব গ্রামের ছাত্রদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের মাধ্যমেই প্রশ্নপত্র ছাত্রদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। এই মডেলটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে।’’ প্রদ্যোৎবাবু বলেন, ‘‘অভিভাবকদের মাধ্যমে ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পন্থা ফলপ্রসূ হবে বলেই বিশ্বাস।’’

শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য বা জেলা স্তরে সর্বিক ভাবে অনলাইন-এ পড়াশোনা শুরু না-হলেও অনেক স্কুল নিজস্ব উদ্যোগে ওই পদ্ধতিতে পঠনপাঠন জারি রাখতে উদ্যোগী হয়েছে। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘মোট কত পড়ুয়াকে অনলাইন পড়াশোনার আওতায় আনা গিয়েছে, তার সঠিক হিসেব না-থাকলেও শতাংশের বিচারে তা পঞ্চাশের বেশি নয়।’’ যদিও শিক্ষকদের একাংশের দাবি, মেরেকেটে ২০ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ নিতে পারছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন