বাংলার সবুজায়ন

এই জয় অহঙ্কারের বিরুদ্ধে, বলছেন দুলাল

লড়াইটা যত না ছিল রাজনৈতিক, তার থেকেও বেশি ব্যক্তি উপেন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে— ভোটের আগে এমনই দাবি ছিল বাগদার কংগ্রেস প্রার্থী দুলাল বরের। সেই ‘ব্যক্তিগত’ লড়াইয়ে জিতে বৃহস্পতিবার বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের গণনা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে দুলালবাবু বললেন, ‘‘এই জয় বাগদার মানুষের গণতন্ত্রের জয়। এই জয় মানুষের অধিকার রক্ষার জয়। এই জয় মানুষের অহঙ্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জয়।’’

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:০১
Share:

জয়ের হাসি।ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

লড়াইটা যত না ছিল রাজনৈতিক, তার থেকেও বেশি ব্যক্তি উপেন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে— ভোটের আগে এমনই দাবি ছিল বাগদার কংগ্রেস প্রার্থী দুলাল বরের। সেই ‘ব্যক্তিগত’ লড়াইয়ে জিতে বৃহস্পতিবার বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের গণনা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে দুলালবাবু বললেন, ‘‘এই জয় বাগদার মানুষের গণতন্ত্রের জয়। এই জয় মানুষের অধিকার রক্ষার জয়। এই জয় মানুষের অহঙ্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জয়।’’

Advertisement

কিন্তু রাজ্য জুড়ে ঘাসফুল শিবিরের এ হেন জয়ের মাঝে কেন বিদায়ী মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের এই ফল হল?

উতত্তর খুঁজতে গেলে ইতিহাস ঘাঁটতেই হবে। উপেনবাবুর সঙ্গে সম্পর্কের আড়াআড়ি ফাটলের জেরে এক সময়ে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় দুলালবাবুকে। যদিও জনপ্রিয় নেতা দুলালকে তারপরেও দেখা যেত দলীয় কর্মসূচিতে। ভোটের কিছু দিন আগে অবশ্য অনুগামীদের নিয়ে দুলালবাবু যোগ দেন কংগ্রেসে। তৃণমূলের একাংশও তাঁকে অনুসরণ করেন। তৃণমূলের ওই অংশেরও নানা অনুযোগ ছিল ব্যক্তি উপেনবাবুর বিরুদ্ধে। সকলেই জানিয়েছিলেন, দলের প্রতি কোনও ক্ষোভ তাঁদের নেই। কিন্তু দলের জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল করলেও উপেনবাবু জয়ী হওয়ার পর থেকে তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও কখনওই দেননি।

Advertisement

কী বলছেন উপেনবাবু? বৃহস্পতিবার গণনা কেন্দ্রে তাঁকে দেখা যায়নি। ফোন করা হলেও বেজে গিয়েছে। তবে বাগদা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তুলসি বিশ্বাসের দাবি, ‘‘মানুষ এখনও এখানে তৃণমূলের সঙ্গেই আছেন। সমস্যা হচ্ছে, উপেনবাবুর আপ্ত সহায়কের কার্যকলাপে মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। যার প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলে।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘ওঁর হেরে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। ওঁকে পরিকল্পনা করে হারান হয়েছে। শপথ গ্রহণ হয়ে গেলে আমরা বিষয়টি নিয়ে দলীয় স্তরে তদন্ত করে দেখব।’’ কারা উপেনবাবুকে পরিকল্পনা করে হারালো সে বিষয়ে অবশ্য জ্যোতিপ্রিয়বাবু খোলসা করে কিছুটা বলেননি।

২০১১ সালে ‘বহিরাগত’ হয়েও উপেনবাবু জয়ী হয়েছিলেন প্রায় ২১ হাজার ভোটে। পরবর্তী সময়ে যতগুলি ভোট হয়েছে, ওই ব্যবধান আরও বেড়েছে। গত বছর বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচনেও বাগদা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী প্রায় ৩৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। সেখানে এ বার উপেনবাবুর হার হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে।

গত বিধানসভা ভোটে উপেনবাবু জয়ী হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। লোকসভার উপ নির্বাচনে তৃণমূলের একাংশকে বাদ দিয়েই ভাল ফল হওয়ায় উপেনবাবুর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেটাই কাল হল শেষ পর্যন্ত। বাগদার সাধারণ মানুষ জানাচ্ছেন, বিধায়ক হিসাবে গত পাঁচ বছরে তাঁরা উপেনবাবুকে প্রয়োজনে কাছে পাননি। বিশেষ করে শংসাপত্র পেতে হিমসিম খেতে হয়েছে। বাগদার স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে চালু হয়নি অপারেশন থিয়েটার। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অবস্থাও তথৈবচ। যার প্রভাব পড়েছে ভোটে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের একাংশ ভেঙে ভোটের আগে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কারণেই সাফল্য। উপেনবাবুর বিরুদ্ধে বহিরাগত তকমা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে প্রচার করা গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হিসাবে দুলালবাবুকেই বেশি ভরসা করেছেন মানুষ।’’

ভোটে জিতে ফের তৃণমূলে ফিরবেন না তো? দুলালবাবু উত্তরে স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমি বেইমান নই। মানুষ আমাকে জোটের প্রার্থী হিসাবে ভোটে জিতিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছর আমি কোথাও যাব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন