School Education

স্কুলছুট কিশোরীকে ক্লাসে ফেরালেন শিক্ষিকা

২১ নভেম্বরে স্কুলে আসার পথে শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার শাখার সংগ্রামপুর স্টেশনে দেখেন, এক কিশোরীকে ঝুড়িতে করে লেবু বিক্রি করছে। নিপা কথা বলেন তার সঙ্গে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

উস্তি শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৫
Share:

আরশিয়াকে পাশে নিয়ে নিপা। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুলছুটদের মূল স্রোতে ফিরে পড়াশোনা শুরুর লড়াইটা সহজ নয়। কিন্তু সেই লড়াইয়ে জিতে গিয়েছে বারো বছরের কিশোরী আরশিয়া খাতুন। চতুর্থ শ্রেণির পড়ে আর স্কুলে যায়নি। অভাবের সংসারে এটা-ওটা কাজ খুঁজে নিতে হয়েছিল। ট্রেনে লেবু বিক্রি করে। তবে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন উস্তির মড়াপাই লরেটো গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা নিপা বসু। তাঁর উদ্যোগে ওই স্কুলে ভর্তি হয়েছে মেয়েটি।

Advertisement

কলকাতার যাদবপুরের রামগড়ের বাসিন্দা নিপা বসু মড়াপাই লরেটো গার্লস হাই স্কুলে ভূগোল পড়ান। ২১ নভেম্বরে স্কুলে আসার পথে শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার শাখার সংগ্রামপুর স্টেশনে দেখেন, এক কিশোরীকে ঝুড়িতে করে লেবু বিক্রি করছে। নিপা কথা বলেন তার সঙ্গে। জানতে পারেন, সংসারের হাল ধরতে পড়া ছেড়ে এই কাজ শুরু করেছে সে। কিন্তু স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না? মেয়েটি সে দিন দিদিমণিকে বলেছিল, ‘‘করে তো ইচ্ছে। বন্ধুদের এখনও ইউনিফর্ম পড়ে স্কুলে যেতে দেখি। মনটা খারাপ লাগে। কিন্তু আমাদের তো উপায় নেই।’’

উপায় খোঁজার চেষ্টা শুরু করেন নিপা। মেয়েটির নাম-ঠিকানা জেনে নেন। তার বাবা সঙ্গে থাকেন না। মায়ের ফোন নম্বর লিখে নেন দিদিমণি।

Advertisement

দিন কয়েক আগে উস্তির পদ্ম গ্রামে আরশিয়ার বাড়িতে হাজির হন নিপা। আর্শিয়ার মা সেরিনা বিবি জানান, স্বামী নেশা করেন। বাড়িতে থাকেন না। তিন কন্যার মধ্যে আর্শিয়া বড়। সংসার চালাতে কাজ খুঁজে নিতে হয়েছে তাকে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে সে। মেয়েকে স্কুলে পাঠাবেন? এক কথায় রাজি হয়ে যান সেরিনা। তবে পড়ানোর খরচ চালানো তাঁর পক্ষে অসম্ভব, জানান সে কথাও। সে দায়িত্ব তিনিই নেবেন, জানান নিপা। সেই মতো দিন কয়েক আগে আরশিয়াকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। থাকার ব্যবস্থা হয়েছে স্কুলের হস্টেলে।

নিপা বলেন, “আরশিয়া জানিয়েছিল পড়তে তার ভালই লাগে। কিন্তু উপায় না থাকায় সব ছেড়ে ট্রেনে ঘুরে ঘুরে লেবু বিক্রির এই কাজ বেছে নিতে হয়েছে।” নিপার কথায়, ‘‘আমরা সকলে মিলে একটু একটু চেষ্টা করলেই অনেক পরিবর্তন আসে সমাজে। তবে প্রশাসনের সহযোগিতাও জরুরি।” আরশিয়ার স্কুলের যা কিছু খরচ, আপাতত নিপাই বহন করছেন।

কী বলছে আরশিয়া? উৎফুল্ল সে। তার কথায়, “আমার পাড়ার বন্ধুরা যখন স্কুলে যেত, ওদের দেখে মন খারাপ হত। আমিও এখন স্কুলে ভর্তি হয়েছি। পড়াশোনা শুরু করেছি। নিপা দিদিমণি যা বলবেন, সব করব।” সেরিনারও আশা, মেয়ের জীবনটা এ বার হয় তো বদলে যাবে। অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথ খুঁজে পাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন