প্রহৃত: মারধরে মাথা ফেটেছে এক ছাত্রের। ছবি: সুজিত দুয়ারি
দু’দল ছাত্রের গোলমালের জেরে শুক্রবার দুপুরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল হাবড়া থানার বাণীপুর বাণী নিকেতন বয়েজ স্কুল। এক পড়ুয়ার ডাকে বাইরে থেকে চলে আসে এক দল দুষ্কৃতী। তাদের মারে জখম হয় দ্বাদশ শ্রেণির তিন ছাত্র। এদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরে পুলিশ স্কুলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ জানিয়েছে, জখম দ্বাদশ শ্রেণির তিন পড়ুয়াদের নাম, আবির বিশ্বাস, সুজয় সিকদার ও রজত চাকী। এদের কারও মাথা ফেটেছে। কারও কান ফেটেছে। কারও আবার ঘাড়ে লেগেছে। রজতের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন স্কুলের বাথরুমের পাশে একাদশ শ্রেণির কয়েকজন পড়ুয়া নিজেদের মধ্যে চিৎকার করে ঝগড়া করছিল। দ্বাদশ শ্রেণির কয়েকজন গিয়ে তাদের থামতে বলে। এতেই একাদশ শ্রেণির কয়েকজন পড়ুয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। ধাক্কাধাক্কিও হয়। এর পরে শিক্ষকরা এসে গন্ডগোল মিটিয়ে দেন। পড়ুয়ারাও নিজেদের ক্লাসে চলে যায়।
অভিযোগ, ওই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র বাইরে থেকে তার পরিচিত কয়েকজন যুবককে ডেকে আনে। দ্বাদশ শ্রেণির তিন পড়ুয়া স্কুল গেটের বাইরে বেরোতেই তাদের উপর চড়াও হয় ওই দুষ্কৃতীরা। তাদের মারধর করা হয়। সে সময় তাদের সঙ্গে ছিল ওই একাদশ শ্রেণির ছাত্রও। পুলিশ জানিয়েছে, বাইরে থেকে আসা দুষ্কৃতীরা লাঠি, ইট, বেঞ্চের ভাঙা পায়া দিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের বেধড়ক মারধর করে। মার খেয়ে তিন ছাত্র রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। জামা-প্যান্ট রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। পরে অন্য পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা জখম ছাত্রদের হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। স্কুলের এক শিক্ষক বাবলুকুমার রায় বলেন, ‘‘ছাত্রদের মারধর করা হচ্ছে দেখে আমরা গিয়ে উদ্ধার করে ওদের হাসপাতালে নিয়ে আসি।’’ জখম এক ছাত্র বলে, ‘‘একাদশ শ্রেণির ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছিল। আমরা ঠেকাতে গিয়েছিলাম। তখন ওদের সঙ্গে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়। কিন্তু তার জন্য এতবড় মূল্য দিতে হবে, তা ভাবতে পারিনি।’’ জখম পড়ুয়াদের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
বহিরাগতদের হাতে স্কুলের ছাত্রদের প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় স্কুলের অন্য পড়ুয়ারা ক্ষোভে ফুঁসছে। তারা ওই দুষ্কৃতীদের এবং তাদের যারা ডেকে এনেছিল সেই ছাত্রদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের কথায়, ‘‘স্কুলে আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। এখন স্কুলে যেতেই ভয় পাচ্ছি।’’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদুর হক এ দিন স্কুলে আসেননি শারীরিক অসুস্থার কারণে। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমি ডাক্তার দেখাতে বারাসত গিয়েছিলাম। স্কুলে যেতে পারিনি। আজকের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
এই ঘটনায় হাবড়া শিক্ষক মহলেও আলোড়ন ছড়িয়েছে। হাবড়া প্রফুল্লনগর বিদ্যামন্দির স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না ছাত্ররা এতটা অসহিষ্ণু হতে পারে। পরিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় এর কারণ। বাড়িতে অভিভাবকদের সঙ্গে ছেলে মেয়েদের বন্ধন ও স্কুলে শিক্ষকদের সঙ্গে পড়ুয়াদের সম্পর্ক ঠিকঠাক না থাকার জন্যই এমনটা ঘটছে।’’