পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ব্যাহত ট্রাক চলাচল
truck

Protest: অনলাইন স্লট বুকিংয়ের বিরুদ্ধে এককাট্টা ট্রাক মালিক-শ্রমিকেরা

আন্দোলন জোরদার করতে সকলে মিলে তৈরি করেছেন, পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটি। আন্দোলনকারীদের দাবি, বনগাঁয় কোনও ভারী শিল্প নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ০৭:৫৭
Share:

প্রতিবাদ: বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় অবস্থান-বিক্ষোভে ট্রাক মালিক, শ্রমিকেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

অনলাইন স্লট বুকিং ব্যবস্থার বিরোধিতা করে পথে নামলেন বনগাঁর ট্রাক মালিক, ট্রাক চালক, খালাসি, শ্রমিকেরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় কিছু ট্রান্সপোর্টার্স।

Advertisement

শনিবার রাতে বনগাঁ শহরে বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ করেন। এর ফলে রাতভর পণ্যভর্তি ট্রাক বনগাঁ শহর থেকে পেট্রাপোল বন্দরে যেতে পারেনি। যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যে সব ট্রাক পেট্রাপোলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, আন্দোলনকারী সেই সব ট্রাক বনগাঁ-চাকদহ সড়ক দিয়ে ঘুরিয়ে দেন। আন্দোলনকারী রাত জেগে ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেন। বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় তাঁরা রাতে খিচুড়ি রান্না করেন।

রবিবার ভোরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসন ও পরিবহণ দফতরের কর্তাদের আলোচনায় আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলেও ঠিক হয়েছে, সমস্যা মেটাতে ৩ অগস্ট রাজ্য পুলিশের ডিআইজি ট্রাফিকের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা বৈঠক করবেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ভোর থেকে কিছু ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরের দিকে রওনা হয়।

Advertisement

বাংলাদেশের সঙ্গে এ রাজ্যের স্থলবন্দরগুলি দিয়ে ট্রাকে পণ্য রফতানি সংক্রান্ত কাজে স্বচ্ছন্দ আনতে দিন কয়েক আগে রাজ্যের পরিবহণ দফতর অনলাইন স্লট বুকিং সিস্টেম বা ‘সুবিধা ভেহিকেলস ফেসিলিয়েশন সিস্টেম’ চালু করেছে।

এই নতুন ব্যবস্থার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বনগাঁর ট্রাক মালিক, ট্রাক চালক, খালাসি, শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, এর ফলে তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন।

আন্দোলন জোরদার করতে সকলে মিলে তৈরি করেছেন, পেট্রাপোল এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট সমন্বয় কমিটি। আন্দোলনকারীদের দাবি, বনগাঁয় কোনও ভারী শিল্প নেই। ট্রাক ও পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ যুক্ত। অনলাইন স্লট বুকিং ব্যবস্থা চালু হওয়ায় বনগাঁর স্থানীয় ট্রাকগুলিতে রফতানি পণ্য ‘লোড’ হচ্ছে না। বিভিন্ন রাজ্য থেকে পণ্যভর্তি ট্রাক সরাসরি বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে। ফলে তাঁদের রোজগারের পথ বন্ধ হতে বসেছে।

আইএনটিইউসি-র বনগাঁ মহকুমা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক প্রভাস পাল জানান, এতদিন বাইরে থেকে আসা পণ্যভর্তি ট্রাকের প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্য স্থানীয় ট্রাকে লোড হত। তারপরে তা বাংলাদেশে যেত। তা ছাড়া, স্থানীয় গোডাউনে মালপত্র রাখা হত। বেসরকারি পার্কিংয়ে ট্রাক রাখা হত। তিনি বলেন, ‘‘নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ায় এখন স্থানীয় গোডাউনে কোনও মালপত্র নেই। বেসরকারি পার্কিং লট ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এ ভাবে চললে আমরা কী করে খাব, তা সরকারকে ভাবতে হবে।’’

আন্দোলনকারীদের দাবি, অনলাইন স্লট বুকিং সিস্টেম তুলে দিয়ে পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে। না হলে ছোট ট্রান্সপোর্টাররাও কর্মহীন হয়ে পড়বেন।

পরিবহণ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো ব্যবস্থায় বাইরের রাজ্য থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে যাওয়ার আগে বনগাঁ শহরের তিনটি জায়গায় (কালীতলা, কালীবাড়ি মোড় এবং বিএসএফ ক্যাম্প মোড়) পরিবহণ দফতরের কাছে ‘এন্ট্রি’ করাত। তারপরে সীমান্তে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষা করত। কখনও কখনও ছাড়পত্র মিলতে একমাসের বেশিও সময় লেগে যেত। ততদিন ট্রাকের মালপত্র স্থানীয় গোডাউনে বা স্থানীয় ট্রাকে তুলে বেসরকারি পার্কিং লটে রাখা হত। বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ ট্রাক বনগাঁয় পণ্য নামিয়ে ফিরে যেত। এই কারণেই বনগাঁয় বহু সংখ্যক গোডাউন এবং পার্কিং লট রয়েছে।

পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, নতুন ব্যবস্থায় দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ট্রাকে পণ্য পরিবহণের জন্য আগেই অনলাইনে ‘স্লট বুক’ করতে পারবেন। এই কাজ করতে চেসিসের জন্য লাগবে ৫ হাজার টাকা এবং পণ্যভর্তি ট্রাকের জন্য ১০ হাজার টাকা।

পরিবহণ দফতরের বনগাঁর আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘নতুন ব্যবস্থায় বাইরে থেকে ট্রাকে আসা পণ্য স্থানীয় ট্রাকে লোডিং করানো যাবে না, এমন নিয়ম নেই। নতুন নিয়মে কেবল স্থানীয় ট্রাকে পণ্য তুললে সেই ট্রাকের নম্বর অ্যাপে এন্ট্রি করানোর কথা বলা আছে।’’

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আঞ্চলিক ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন, সেটাও সরকারকে দেখতে হবে।’’ শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া। তিনি বলেন, ‘‘নতুন ব্যবস্থা চালু থাকলে বনগাঁর অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।’’

বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ার রাস্তায় ট্রাক দাঁড়াচ্ছে না। যানজট কমছে। নতুন ব্যবস্থায় সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমাধানের চেষ্টা করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন