পাত-পেড়ে: বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
টোটো নিয়ে যাতায়াতের পথে প্রায়ই তাঁর চোখে পড়ত, কোনও কারণ ছাড়াই পথকুকুরদের উপর অত্যাচার করছেন কিছু লোকজন। হয়তো রাস্তায় পড়ে থাকা খাবারের টুকরোর দিকে এগোচ্ছে কোনও কুকুর, তা দেখে কুকুরটির দিকে ঢিল অযথা ছোড়া হচ্ছে। তবে তাঁর মনকে ধাক্কা দিয়েছিল অন্য এক দৃশ্য। এক টুকরো খাবারের জন্য কুকুরদের কঠিন লড়াই। সুস্থসবল কুকুরের ভাগ্যে তবু কিছু জুটলেও সমস্যায় পড়ে শারীরিক ভাবে অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী কুকুর।
এ সব দেখে বনগাঁ শহরের শক্তিগড় এলাকার বাসিন্দা পলাশ অধিকারীর মনে হয়েছিল, সপ্তাহে অন্তত একটি দিনও যদি কুকুরগুলিকে পেটভরে খাওয়ানো যেত! যেমন ভাবা, তেমন কাজ। পলাশ তার পরিকল্পনার কথা জানায় বন্ধু অভিজিৎ বিশ্বাসকে। তারপর দু’জনে মিলে তাঁদের কিছু পরিচিত লোকজনের থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে নেমে পড়েন কাজে।
গত শুক্রবারই প্রথম তাঁদের ইচ্ছাপূরণ হল। সেদিন পলাশ এবং অভিজিৎ কুড়ি কেজি মুরগির মাংস ও কুড়ি কেজি চাল কেনেন। তারপর রাঁধুনি দিয়ে মাংস-ভাত রান্না করিয়ে তা ভাল করে মাখিয়ে টোটোয় চাপিয়ে সন্ধেবেলায় দু’জনে বেরিয়ে পড়লেন। শহরের আনাচে-কানাচে ঘুরে খাওয়ালেন কুকুরগুলিকে।
তাঁদের সঙ্গে অবশ্য ছিলেন ‘বনগাঁ স্ট্রিট ডগস’ সংগঠনের সোমনাথ দাস, সিদ্ধার্থ ঘোষ, তিতান ভট্টাচার্য প্রমুখ। সোমনাথেরা বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকার অসুস্থ কুকুরদের নিয়ে কাজ করছেন। শহরের কোথায়-কোথায় অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী কুকুরের বাসা, তা তাঁরাই ভাল জানেন। সোমনাথরা তাই প্রথমদিনটিতে পলাশদের সাহায্য করলেন। তাঁরাই সেদিন কুকুরগুলিকে ডাকাডাকি করে জড়ো করলেন। তার পর কাগজের থালায় মাংস-ভাত খাওয়ানো হল তাদের। পলাশ ও অভিজিৎ বলেন, ‘‘একটা দিনের জন্য হলেও যে কুকুরগুলিকে পেটভরে খাওয়াতে পারলাম, সেটা ভাল লাগছে। ভবিষ্যতেও খাওয়াব।’’ পথকুকুর নিয়ে কাজ করা বারাসতের একটি সংঠনের সদস্য অর্পিতা চৌধুরী এই কুকুর-সেবার কথা শুনে বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ পলাশদের কাজে উৎসাহ পাবেন। এরপর হয়তো তাঁরাও এগিয়ে আসবেন। এসব দেখে হয়তো কুকুরের উপর অকারণ অত্যাচারও কমবে। এই সমাজে কুকুরেরও তো বেঁচে থাকবার অধিকার রয়েছে।’’