দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে ক্ষোভ দলে

ভেড়ির টাকা, খাস জমির দখল নিয়ে বিবাদ

দ্বন্দ্বের ইতিহাস দীর্ঘ। কখনও খুনোখুনি, কখনও মারপিট-বোমাবাজি, কখনও ঘর পুড়িয়ে দেওয়া, লুঠপাট— এ সবের জেরে ক্যানিংয়ের গ্রামে গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ ঘনিয়ে থাকে বছরভর। তৃণমূলের শীর্ষস্তরের নেতারাও এই গোলমালের উপরে রাশ টানতে পারেননি বছরের পর বছর ধরে। 

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৫
Share:

টহল: পুলিশি টহল পাহারা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

দ্বন্দ্বের ইতিহাস দীর্ঘ। কখনও খুনোখুনি, কখনও মারপিট-বোমাবাজি, কখনও ঘর পুড়িয়ে দেওয়া, লুঠপাট— এ সবের জেরে ক্যানিংয়ের গ্রামে গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ ঘনিয়ে থাকে বছরভর। তৃণমূলের শীর্ষস্তরের নেতারাও এই গোলমালের উপরে রাশ টানতে পারেননি বছরের পর বছর ধরে।

Advertisement

কিন্তু কীসের জেরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আগুন নেভে না ক্যানিংয়ে?

স্থানীয় মানুষ ও দলের একাংশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মাতলা নদীর চরে হাজার হাজার বিঘা সরকারি জমিতে মেছোভেড়ি আছে। ভেড়ির কাঁচা টাকার দখল নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার শাসন যেমন রক্তক্ষয়ী দীর্ঘ লড়াইয়ের সাক্ষী, ক্যানিংয়ের অবস্থাও এখন কতকটা এমন। তা ছাড়া সরকারি খাস জমির দখল নিয়েও চলে লড়াই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ক্যানিং বাজার সহ মাতলার চরের খালি সরকারি খাস জমি জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। মোটা টাকার বিনিময়ে সেই সব জমি হস্তান্তর হচ্ছে।’’ কারণ আছে আরও। সরকারি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা পঞ্চায়েতের হাত দিয়ে লেনদেন হয়। তাতেও প্রচুর নয়ছয় হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই টাকার দখল, ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েও তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর নিরন্তর আকচাআকচি চলে বলে অভিযোগ।

Advertisement

তা ছাড়া, ইগোর লড়াই তো আছেই।

সেটা কেমন?

শৈবাল লাহিড়ি সোনারপুর থানা এলাকার বাসিন্দা হয়েও কী ভাবে ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে দলের অন্দরেই? তিনি নিজের ব্যবসার কাজে ক্যানিংয়ে আসেন। সন্ধ্যা হলে সোনারপুরে ফিরে যান। দলের প্রয়োজনে বা অন্য কোনও কারণে রাত-বিরেতে তাঁকে পাশে পাওয়া যায় না। দলের কেউ বিপদে-আপদে পড়লেও অনেক সময় পাশে সময় দিতে পারেন না শৈবাল, এমন অভিযোগ আছে তাঁকে নিয়ে। অথচ সেই তিনিই ক্যানিংয়ে তৃণমূলের হয়ে ছড়ি ঘোরাবেন, সেটা স্থানীয় নেতাদের অনেকে মেনে নিতে পারেন না। এ নিয়েও পরেশরাম দাস গোষ্ঠীর সঙ্গে শৈবাল লাহিড়ি গোষ্ঠীর বিবাদ রয়েছে।

ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র তথা ক্যানিং ১-এর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল-শৈবালরা একই গোষ্ঠীর। অন্য দিকে রয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তথা যুব তৃণমূলের সভাপতি পরেশরাম দাস, দলের নেতা উত্তম দাস প্রমুখ। শৈবাল ও শ্যামল দু’জনেই সোনারপুর এলাকার বাসিন্দা। পরেশ ও উত্তম দাস ক্যানিংয়ের ভূমিপুত্র। সে দিক থেকে পরেশ গোষ্ঠীর সংগঠন কিছুটা শক্তিশালীও এই এলাকায়। পঞ্চায়েত ভোটের পরে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অর্ণব রায় শৈবালের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর থেকে শৈবাল গোষ্ঠীরও ক্ষমতা বেড়েছে। তারপর থেকেই পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি কার দখলে থাকবে, তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে।

এ নিয়ে পরেশ বলেন, ‘‘আমি দলের সৈনিক। দলের নির্দেশ মেনে কাজ করব। আমি কারও বিরুদ্ধে নই। তবে দলের কাছে আমার আর্জি, ক্যানিংয়ের মানুষ কী চান, তা একবার দল ভেবে দেখুক।’’ শৈবাল অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি।

দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘ক্যানিংয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের উপরে রাশ টানতে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরেও সুরাহা হচ্ছে না। কী ভাবে গোলমাল থামানো যাবে, সেটা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন