Muriganga

চোরাগোপ্তা চর মুড়িগঙ্গায়, সমস্যা ভেসেল চলাচলে

প্রথম দিকে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার কটালে ভাটার সময়ে জল কমে যাওয়ায় ও চর পড়ার কারণে সারা দিনে ৬টি ভেসেল ২১ ট্রিপে ৬-৭ ঘণ্টা করে চলাচল করত। যত দিন এগিয়েছে, চরের আয়তন বেড়েই চলেছে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৯:০২
Share:

কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাটের কাছে ড্রেজিং করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ফাইল চিত্র।

সন্ধ্যা নামলেই বিপদ। জলের নীচে কোথায় আছে চর, বোঝার জো নেই।

Advertisement

শুক্রবার রাতেই ঘটেছে এমন দুর্ঘটনা। সাগরে রুদ্রনগরে বিজেপির একটি সভা ছিল। ওই সভায় দলের নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল গিয়েছিলেন। রাতে সভা সেরে ফেরার পথে কচুবেড়িয়া ঘাটে ফিরে জানতে পারেন, মুড়িগঙ্গায় ভাটা চলছে। ভেসেল চলাচল বন্ধ। বাধ্য হয়ে একটি ছোট ট্রলার ভাড়া করে জনা ৩৫ নেতা-কর্মী কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটে ফিরছিলেন। ঘাটে ঢোকার আগেই চরে আটকে যায় ট্রলার।

সাগরের বিজেপির নেতা অশোক নায়ক বলেন, ‘‘রাত ৮টা থেকে ঘণ্টা দু’য়েক নদীর মাঝে আটকে ছিল ট্রলার। জোয়ার আসার পরে তবেই ঘাটে ফিরতে পেরেছে।’’

Advertisement

মুড়িগঙ্গা নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছে ভেসেল চলাচল। কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাট থেকে সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাট পর্যন্ত নদী পারাপারের দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী ও সমুদ্র ঘেরা সাগর ব্লকে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের বসবাস। তাঁদের নিত্য প্রয়োজনে মুল ভূখণ্ডে যাতায়াত করতে হয়। কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার বা কলকাতায় যেতে হলে ওই নদী পার হতে হবে। আবার সাগরদ্বীপে রয়েছে বহু স্কুল, কলেজ থানা, অফিস কাছারি। ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, কলকাতা থেকে বহু মানুষ নদী পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়াও সাগরে আছে কপিল মুনির মন্দির। মন্দির দর্শনে প্রায় সারা বছর ধরে গোটা দেশ থেকে মানুষ আসেন। তাঁদেরও লট-৮ ঘাট থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার চওড়া মুড়িগঙ্গা নদীপথ পার হয়ে কচুবেড়িয়া ঘাটে উঠে বাসে করে গঙ্গাসাগরে যেতে হয়।

বছর পনেরো আগে থেকে মুড়িগঙ্গা নদীতে লট-৮ ঘাটের কাছে চর পড়তে শুরু করে। প্রথম দিকে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার কটালে ভাটার সময়ে জল কমে যাওয়ায় ও চর পড়ার কারণে সারা দিনে ৬টি ভেসেল ২১ ট্রিপে ৬-৭ ঘণ্টা করে চলাচল করত। যত দিন এগিয়েছে, চরের আয়তন বেড়েই চলেছে। মাস কয়েক আগে লকডাউনের সময়ে ভেসেল চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে ভেসেল চলাচলের চ্যানেলে চর পড়ে যায়। লকডাউন ওঠার পর থেকেই বর্তমানে কটালের ভাটার সময়ে ৩টি ভেসেল ১১ ট্রিপ ৩-৪ ঘণ্টার বেশি ভেসেল চলাচল করতে পারছে না। তাতেই হয়রানি বেড়েছে যাত্রীদের।

চর কাটার জন্য গত বছর গঙ্গাসাগর মেলার সময় উদ্যোগ করে রাজ্য সরকার। ড্রেজিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের অধীনে ১০০ কোটি টাকায় ৭ বছরের চুক্তি হয়। সেই মতো ওই সংস্থা ৭টি ড্রেজার মেশিন এনে সে সময়ে কাজ শুরু হয়। ভূতল পরিবহণ দফতরের অধীনে ভেসেল চলে। দফতরের কর্মীদের অভিযোগ, পরিকল্পনামাফিক ড্রেজিং না হওয়ায় এই বিপত্তি। যে চ্যানেল দিয়ে ভেসেল চলাচল করে, ওই চ্যানেলের মুখে বালির চর জমে রয়েছে। এর জেরে কটালের ভাটার সময়ে ভেসেল চলাচল করতে পারছে না। যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।

তাঁদের আরও অভিযোগ, ৭টি মেশিন পলিকাটার জন্য আনলেও মাত্র ৩টি মেশিন সারা দিন সামান্য সময় ধরে চর কাটার কাজ করছে।

চর কাটার দায়িত্বে রয়েছে সেচ দফতর। কাকদ্বীপ মহকুমা সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণ দে অবশ্য বলেন, ‘‘খুব দ্রুততার সঙ্গে চর কাটার কাজ চলছে। সাগর মেলার আগে নদীপথে চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য সমস্ত রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন