নোটে নাজেহাল মাছ বাজার

নোট বাতিলের চোটে বন্ধ হতে বসেছে কাকদ্বীপ এবং ডায়মন্ড হারবার মহকুমার পাইকারী মাছ ব্যবসা। ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্র বাজার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে মাছ পৌঁছে যায়। এই বাজারে মাছ কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেলে বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের পাতে মাছের টান পড়তে পারে।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪২
Share:

শুনশান মাছ বাজার।—নিজস্ব চিত্র।

নোট বাতিলের চোটে বন্ধ হতে বসেছে কাকদ্বীপ এবং ডায়মন্ড হারবার মহকুমার পাইকারী মাছ ব্যবসা। ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্র বাজার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে মাছ পৌঁছে যায়। এই বাজারে মাছ কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেলে বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের পাতে মাছের টান পড়তে পারে।

Advertisement

গত মঙ্গলবার রাতে দেশ জুড়ে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর থেকে খোলাবাজারে খুচরো টাকার আকাল শুরু হয়েছে। আশা ছিল, ব্যাঙ্ক এবং এটিএম পরিষেবা স্বাভাবিক হলে সমস্যা আস্তে আস্তে মিটবে। কিন্তু সমস্যা মিটে যাওয়ার বদলে বেড়ে গিয়েছে। পর্যাপ্ত নোটের অভাবে লাটে উঠতে বসেছে দৈনন্দিন বাজার। তার প্রভাব এসে পড়েছে ডায়মন্ড হারবাব পাইকারি মাছ বাজারে। মাছ ব্যবসায়ীদের একাংশের আশঙ্কা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আজ, সোমবার থেকে মাছের পাইকারী বিকিকিনি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

মৎস্যজীবী সংগঠন এবং পাইকারী মাছ ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা থেকে মৎস্যজীবীরা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে মূলত ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্র বাজারে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। আড়তদারেরা সেই মাছ বিক্রি করেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। এই বাজারে প্রতি দিন কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে সেই ব্যবসায় টান পড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী বিজয় সাউয়ের দাবি, তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত ১০০ টাকার নোট নেই। তাই আড়তদারদের মাছ কেনার পরে ১০০ টাকার সঙ্গে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার কিছু নোট অথবা চেক নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আড়তদারেরা সেই নোট অথবা চেক নিতে অস্বীকার করছেন। তাই ব্যবসা চালানো সম্ভব হচ্ছে না।আড়তদারদের পাল্টা দাবি, তাঁরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নিয়ে ট্রলার মালিক এবং মৎস্যজীবীদের ‘পেমেন্ট’ করেন। ট্রলার মালিক এবং মৎস্যজীবীরা ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট অথবা চেক নিচ্ছেন না। তাই তাঁরা ওই নোট অথবা চেক নিতে অপারগ। ডায়মন্ড হারবারের আড়তদার দিলীপকুমার দাস বলেন, ‘‘ট্রলার মালিকেরা চেক নিতে চাইছেন না। কারণ সেটি ভাঙাতে সময় লাগবে। ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট নেওয়ার তো প্রশ্নই নেই।’’

Advertisement

ট্রলার মালিক এবং মৎস্যজীবীদের দাবি, পেট্রোল পাম্পে গিয়ে ১০০ টাকা অথবা নতুন নোট দিয়ে ট্রলারের তেল কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে মৎস্যজীবীদের খাওয়াদাওয়া, তাঁদের সংসার খরচ, ট্রলারের রক্ষণাবেক্ষণ, বরফ কেনা। কোনও ক্ষেত্রেই ৫০০ ও ১০০০ চলছে না।

পশ্চিমবঙ্গ মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতি এবং সতীনাথ পাত্রদের প্রশ্ন, ‘‘পাইকারি ব্যবসায়ীরা মাছ না কেনার কথা জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক ট্রলার বাইরে রয়েছে। তাঁরা মাছ নিয়ে ফিরে আসার পরে সেগুলির কী হবে?’’ তাঁদের আশঙ্কা, মৎস্যজীবীদের বাইরে বরফ কল থেকে শুরু করে আরও কয়েকটি অনুসারী শিল্প মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। হঠাৎ ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন