ফেসবুকে খোঁজ, ঘরে ফিরলেন উমা

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোরের দিকে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৫৪
Share:

আদর: মাকে ফিরে পাওয়ার পরে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

তথ্য বলতে হাতে ছিল দু’টো নাম। ‘অপূর্ব বিশ্বাস’ এবং ‘কৃষ্ণনগর’।

Advertisement

কৃষ্ণনগর এলাকায় যত অপূর্ব বিশ্বাস আছে, ফেসবুকের লিস্ট ধরে তাঁদের খুঁজে বের করতে শুরু করেন বনগাঁ হাসপাতালের দুই নার্স। হাসপাতালের এক রোগিনীকে বাড়ি ফেরানোর জন্যই এত চেষ্টা। শেষমেশ ফেসবুকই অপূর্বর হদিস দিয়েছে। দেড় বছর পরে ছেলে যখন দেখল হারানো মাকে, তখন মা-ছেলে দু’জনের চোখেই জল।

কৃষ্ণনগর থেকে বনগাঁয় এলেন কী ভাবে উমা বিশ্বাস?

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোরের দিকে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। মানসিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন।

বনগাঁ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেন থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন মহিলা। রক্তাক্ত অবস্থায় বনগাঁ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ছটফট করছিলেন। ২০১৭ সালের মে মাসের ঘটনা। জিআরপি উমাকে উদ্ধার করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘মহিলার মাথায় আড়াই ইঞ্চি ক্ষত ছিল। অচৈতন্য ছিলেন। মাথায় কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছিল। পরে জ্ঞান ফেরে।’’ কিন্তু জ্ঞান ফিরলেও নাম-ঠিকানা জানাতে পারেননি।

চিকিৎসায় ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছিলেন উমা। মানসিক চিকিৎসাও হয় তাঁর। কিছু দিন পরে নিজের নাম বলতে পেরেছিলেন উমা। আর বলেন, ছেলের নাম অপূর্ব। বাড়ি কৃষ্ণনগরে।

এই তথ্যটুকুর ভিত্তিতেই লড়ে যান হাসপাতালের শল্য বিভাগের দুই নার্স কমলিকা বিশ্বাস ও সুচেতা সরকার। শুরু হয় ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি। কৃষ্ণনগরের ঠিকানায় কয়েক জন অপূর্ব বিশ্বাসকে খুঁজে বেরও করেন তাঁরা। প্রত্যেকের ছবির প্রিন্ট বের করে দেখান উমাকে।

এক জনের ছবি দেখে হইহই করে ওঠেন উমা। বলেন, এই তো তাঁর ছেলে। ফেসবুকে তাঁর কাছে পৌঁছে যায় এক নার্সে ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’। কিন্তু তারপর থেকে আর কোনও উচ্চবাচ্য নেই।

ফেসবুকে সাড়া না পেয়ে সম্রাদ মোদক নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করেন কমলিকা-সুচেতারা। এই ব্যক্তি অপূর্বর কোনও একটি ছবিতে ‘লাইক’ দিয়েছিল। জাগুলিয়ার বাসিন্দা সম্রাট ফেসবুকে সাড়া দেন। তিনিই যোগাযোগ করিয়ে দেন অপূর্বর সঙ্গে।

বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী বিথীকাকে নিয়ে অপূর্ব হাজির হন বনগাঁ হাসপাতালে। বলেন, ‘‘এত দিন ধরে মাকে কম খুঁজিনি। আত্মীয়-স্বজন, পুলিশ— সকলের কাছে গিয়েছি। একটা সময়ে আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখন থেকে মাকে আর কখনও চোখের আড়াল করব না।’’

এ দিন দুপুরে নতুন শাড়ি পরে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন উমা। এত দিন ধরে হাসপাতালই তাঁর বাড়িঘর হয়ে উঠেছিল। উমা বলেন, ‘‘এখানে সকলে আমাকে ভালবাসে। সময় পেলে ফের আসব।’’

কমলিকা-সুচেতাদের বাড়িতে নেমতন্ন করে গিয়েছেন উমা। সুচেতা বলেন, ‘‘উনি ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন— এটুকুই চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন