ঘরে পড়ে মহিলার দেহ, উধাও টাকা, ডাকাতি করতে এসে খুন!

মায়ের আসতে দেরি দেখে বার কয়েক ফোন করেন ছেলে। ফোন বেজে বেজে থেমে যায়। যে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল মহিলার, সেখানেই ক্যাটারিংয়ের আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর ছেলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাদুড়িয়া শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০২:০০
Share:

তদন্ত: উপরে, এই আলমারিই ভাঙে দুষ্কৃতীরা। ছবি নির্মল বসু

সেজেগুজে নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল মহিলার। ছেলে ও তাঁর বন্ধুরা বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে বলেছিলেন, একটু পরেই আসছেন।

Advertisement

সন্ধে তখন ৭টা। মায়ের আসতে দেরি দেখে বার কয়েক ফোন করেন ছেলে। ফোন বেজে বেজে থেমে যায়। যে বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল মহিলার, সেখানেই ক্যাটারিংয়ের আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন তাঁর ছেলে। তিনি রাত ১২টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখেন, দরজা হাট করে খোলা। ঘরে আলো জ্বলছে। ঢুকতেই চোখে পড়ে, মায়ের দেহ পড়ে আছে মেঝেয়। গলায় রক্তের দাগ। আলমারির লকার ভাঙা। সেখান থেকে উধাও গয়না, কয়েক লক্ষ নগদ টাকা।

রবিবার রাতে বাদুড়িয়ার আড়বালিয়ার আড়তদার পাড়ায় এই ঘটনায় নিহতে নাম পুষ্পরানি আড়তদার (৫১)। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ডাকাতির জন্যই ঢুকেছিল এক বা একাধিক দুষ্কৃতী। সম্ভবত তাদের কাউকে চিনে ফেলায় শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে পুষ্পরানিকে। তাঁর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। সোমবার ঘটনাস্থলে যান বসিরহাট জেলার পুলিশ সুপার, এসডিপিও, আইসি এবং ওসি। বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।

Advertisement

শোকার্ত শান্তনু। সোমবার। ছবি নির্মল বসু

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আড়তদার পাড়ায় দোতলা বাড়ি অমিয় আড়তদারের। কলকাতায় নৈশপ্রহরীর কাজ করেন তিনি। অমিয়র স্ত্রী পুষ্পরানি। তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে শান্তনু ক্যাটারিংয়ের কাজ করেন। দিন কয়েক আগে বাড়িতে মার্বেল বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। রাজমিস্ত্রিদের পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষাধিক টাকা তুলে রাখা হয়েছিল বাড়িতে।

পুলিশ জানায়, সন্ধে ৭টা পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে শান্তনু বাড়িতেই ছিলেন। তারপরে কাজে বেরোন। মা সে সময়ে জানিয়েছিলেন, সাজগোজ করে একটু পরেই যাবেন নিমন্ত্রণ বাড়িতে। শান্তনুর দাবি, মা অনেক রাত পর্যন্ত আসেননি। তাঁর মোবাইলও বেজে গিয়েছে। ব্যস্ত থাকায় আর খোঁজ করতে পারেননি শান্তনু। রাত ১২টা নাগাদ ফিরে দেখেন ওই কাণ্ড।

সোমবার আড়তদার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন শান্তনু। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়। বাবাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়ে স্নিগ্ধা। অমিয় বলেন, ‘‘বাড়িতে কাজ হচ্ছিল বলে লক্ষাধিক টাকা রাখা ছিল। আলমারি ভেঙে দুষ্কৃতীরা ওই টাকা এবং কিছু গয়না নিয়ে পলিয়েছে।’’

পুলিশ মনে করছে, কোথায় টাকা রাখা ছিল, তা জানত দুষ্কৃতীরা। যে কারণে একমাত্র আলমারির লকার ভাঙা ছাড়া ঘরে আর কোথাও কিছুতে হাত দেয়নি তারা। ধ্বস্তাধস্তিরও কোনও চিহ্ন নেই ঘরে।

পুলিশ জানায়, বাড়িতে যে রাজমিস্ত্রি এবং তার জোগাড়েরা কাজ করছিল, তারা রবিবার কাজে এলেও সোমবার কেউ আসেনি। কয়েক জনকে সন্দেহের তালিকায় রেখে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন