শক্ত-হাতে: বাইচের আসরে দক্ষ প্রমিলারাও। নিজস্ব চিত্র
বাওড়ের জল তোলপাড় করে তীব্র গতিতে নৌকো ছোটাচ্ছেন মহিলারা। ঝপাঝপ শব্দে ছন্দোবদ্ধ গতিতে ওঠানামা করছে দাঁড়। কানে ভেসে আসছে সমবেত হল্লা আর কাঁসর-ঘণ্টার আওয়াজ।
চুয়াটিয়া পাঁচমাইল গ্রামের পুষ্পা বাগচি, চকবেয়ারা গ্রামের রিংকু বৈদ্য, ভবানীপুরের সন্ধ্যা মণ্ডল বলেন, ‘‘মহিলারা শুধু রান্নাঘরে হাতা-খুন্তিই ধরেন না, শক্ত হাতে নৌকার হাল ধরতেও জানেন।’’
বুধবার বাগদার চকবেয়ারা গ্রামে কিশোর সঙ্ঘের পরিচালনায় স্থানীয় জাগনা বাঁওড়ে চলছিল মহিলাদের বাইচ প্রতিযোগিতা। দু’দিনে অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার পুরুষ দলের ও বুধবার মহিলাদের প্রতিযোগিতা ছিল। প্রতি দলে সাতজন প্রতিযোগী। ঘাটপাতিলা, মাথাভাঙা, রানাঘাট, ভবানীপুর, পারমাদন, নলডুগারি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে মহিলা-পুরুষ প্রতিযোগিতায় যোগদান করেন। আয়োজক ক্লাব চকবেয়ারা কিশোর সঙ্ঘের সম্পাদক ভীষ্ম মণ্ডল বলেন, ‘‘তিরিশ বছর আগে এই বাওড়ে বাইচ প্রতিযোগিতা হত। একবার গন্ডগোলের জন্য তা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে পূর্বহুদা বা হাদিখালি গ্রামে বাইচ দেখতে যেতে হত গ্রামবাসীদের। গত বছর থেকে আমরা আবার এখানে বাইচ শুরু করেছি।’’ বাইচ প্রতিযোগিতায় যোগ দেতে ঘাটপাতিলা থেকে এসেছিলেন রমা মণ্ডল। বললেন, ‘‘এখন মেয়েরা কোনও দিকেই পিছিয়ে নেই। বাইচের মতো শ্রমসাধ্য একটি খেলাতেও যোগ দিচ্ছি আমরা।’’ রানাঘাট থেকে এসেছিলেন কল্পনা কীর্তনীয়া। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলাদের মধ্যে বাইচের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’’ বাইচ দেখতে চকবেয়ারা গ্রামে জাগনা বাওড়ের পাড়ে ভিড় জমিয়েছিলেন দশ-বারোটি গ্রামের মানুষ। মাথাভাঙা গ্রাম থেকে বাইচ দেখতে এসেছিলেন চুরাশি বছরের রমণীমোহন বাড়ুই। বললেন, ‘‘দেশভাগের আগে এ দেশে এসেছি। ও পার বাংলায় ফরিদপুরে কাটাখালি নদীতে বাইচ খেলতাম। এখনও চোখ বন্ধ করে জলের ঢেউয়ের শব্দ, মানুষের হল্লা শুনলে যেন দেশের বাড়ির গন্ধ পাই।’’