Migrant Workers

এলাকায় কাজ নেই, ভিন্‌ রাজ্যই ভরসা

গোসাবার সাতজেলিয়ায়ার বাসিন্দা মিঠুন সুদর্শন নায়েক, সুশীল মণ্ডল, বাসন্তীর ঝন্টু সর্দার, নিধিরাম দাসেরা বলেন, “এলাকায় কোনও কাজ নেই।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

ক্যানিং  শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৭
Share:

ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে ক্যানিং স্টেশন চত্বরে ভিড় পরিযায়ী শ্রমিকদের। —ফাইল চিত্র।

শিক্ষিত যুবক-যুবতী থেকে দিনমজুর, রাজমিস্ত্রি— কর্মসংস্থানের জন্য ভিন্‌ রাজ্যই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের বহু মানুষের ভরসা। এলাকায় সে ভাবে কাজ নেই। একশো দিনের কাজও বন্ধ। দিন পনেরো আগেই ধান রোয়ার কাজে বাসন্তী, গোসাবা, ক্যানিং, কুলতলি, জয়নগর, পাথরপ্রতিমা-সহ জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক রওনা দিয়েছেন তামিলনাড়ু, কেরল, চেন্নাই, আন্দামান-সহ অন্যান্য রাজ্যে। রাজমিস্ত্রির কাজ-সহ অন্যান্য কাজের জন্যও দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো শহরে বহু মানুষ পাড়ি দেন সারা বছর জুড়ে।

Advertisement

রাজ্যে কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে গত জুন মাসে। ওড়িশার বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় জেলার একের পর এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পেটের টানে ভিন্‌ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েই দুর্ঘটনায় এত প্রাণ গেল বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। তারপরেও অবশ্য ভিন্‌ রাজ্যে যাওয়ার আগ্রহ কমেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।

গোসাবার সাতজেলিয়ায়ার বাসিন্দা মিঠুন সুদর্শন নায়েক, সুশীল মণ্ডল, বাসন্তীর ঝন্টু সর্দার, নিধিরাম দাসেরা বলেন, “এলাকায় কোনও কাজ নেই। টুকটাক কাজ করলেও পয়সা ঠিক মতো পাই না। ভিন্‌ রাজ্যে দু’তিন মাস কাজ করলে ৪০-৫০ হাজার টাকা মেলে। ওই টাকা দিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ চলে।” ঝড়খালির বাসিন্দা প্রণব জানা, নীতিশ গায়েনরা বলেন, “গ্রামে কোনও কাজ নেই, আছে শুধু রাজনীতি। বিরোধী দল করলে জব কার্ডও মেলে না।তা ছাড়া, জব কার্ড থেকেও খুব একটা লাভ হয় না।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, দুয়ারে সরকার শিবিরে পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকায় নাম নথিভুক্ত হলেও এখনও পর্যন্ত কিছুই সুরাহা হয়নি।

Advertisement

প্রতি বছর পুজোর পরেই ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দেন সুন্দরবনের বহু মানুষ। ইদানীং মহিলাদেরও ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে জানালেন গ্রামের মানুষ। ধান রোয়া, রাজমিস্ত্রি বা দিনমজুরের কাজ সহজেই মেলে অন্যত্র। পারিশ্রমিকও বেশি। পরিযায়ী শ্রমিকদের দাবি, এলাকায় কাজ করলে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা মেলে। রোজ কাজের সুযোগও থাকে না। ভিন্‌ রাজ্যে দৈনিক ১২০০-১৫০০ টাকা মজুরি পাওয়া যায়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একশো দিনের কাজ রাজ্য জুড়েই বন্ধ। কিন্তু আমরা বিভিন্ন দফতরের তরফে জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ দিচ্ছি। রাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে পাইপ লাইনের কাজ বা নদীবাঁধ সংস্কারের কাজে শ্রমিকদের নেওয়া হচ্ছে। তবে সকল জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি।” সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় যা জবকার্ড হোল্ডার যত জন, তার অর্ধেকও এখনও সরকারি উদ্যোগে কোনও কাজ পাননি।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি নীলিমা মিস্ত্রী বিশাল বলেন, “কেন্দ্র সরকার একশো দিনের টাকা আটকে রেখেছে। গ্রামের মানুষ কাজ করেও টাকা পাননি। তাই তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন ভিন্‌ রাজ্যে যেতে। তবে আমারা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে তাঁদের কাজ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এলাকায় যে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে, সেখানে কাজ পাচ্ছেন শ্রমিকেরা।” সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার কথায়, “আমরা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মাধ্যমে এলাকায় যে উন্নয়নের কাজ করছি, সেখানে গ্রামের মানুষকে কাজের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিনামূল্যে রেশন-সহ রাজ্য সরকারের বহু প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন মানুষ। তবুও বাড়তি রোজগারের আশায় অনেকে ভিন্‌ রাজ্যে যাচ্ছেন।”

অন্য দিকে, বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুনীপ দাস বলেন, ‘‘এত বছর ধরে একশো দিনের কাজের টাকা তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী, পঞ্চায়েত প্রধানেরা চুরি করেছেন। আগে সে সবের হিসেব দিক। তারপরে কেন্দ্রের কাছে টাকা চাইবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন