কর্মবিরতি শুরু, বন্ধ পণ্য আমদানি রফতানি
Petrapol

বন্দরে কাজ হারিয়ে বিপাকে শ্রমিকেরা

বন্ধ দোকানপাট। চলছে না যানবাহনও। এ দিন কার্যত অলিখিত বন্ধের চেহারা দেখা গিয়েছে বন্দর এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:০৪
Share:

কর্মবিরতির জেরে শুনশান পেট্রাপোল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

পথ অবরোধ, প্রতীকী কর্মবিরতিতে কাজ হয়নি। তাই রবিবার থেকে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করল ‘পেট্রাপোল স্থলবন্দর জীবন জীবিকা বাঁচাও কমিটি’। ফলে বন্ধ হয়ে গেল পণ্য আমদানি, রফতানি।
বন্ধ দোকানপাট। চলছে না যানবাহনও। এ দিন কার্যত অলিখিত বন্ধের চেহারা দেখা গিয়েছে বন্দর এলাকায়। একাধিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ‘পেট্রাপোল স্থলবন্দর জীবন জীবিকা বাঁচাও কমিটি’র ডাকে শুরু হয়েছে এই কর্মবিরতি। কমিটির আহ্বায়ক প্রভাস পাল বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে এলেও সমস্যা মেটেনি। বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপরও সমস্যা না মিটলে অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।’’
কমিটির দাবি, করোনা পরিস্থিতির আগে ‘হ্যান্ড কুলি’ ও পরিবহণ শ্রমিকেরা যে পরিবেশে কাজ করতেন তা ফিরিয়ে আনতে হবে, চালক খালাসিদের আগের মতো পেট্রাপোল- বেনাপোলের মধ্যে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে দিতে হবে। এ ছাড়াও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক দাবি রেখেছে কমিটি। দাবি আদায়ে এর আগে বন্দর এলাকায় পথ অবরোধ করেছিল কমিটি। হয়েছিল প্রতীকী কর্মবিরতিও। এ বার এক ধাপ এগিয়ে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করল কমিটি।
করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল দিয়ে কয়েক মাস বন্ধ ছিল দু’দেশের মধ্যে পণ্য রফতানি আমদানির কাজ। বন্ধ ছিল দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে যাত্রীদের যাতায়াতও। ফলে বন্দর কেন্দ্রিক স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। জুন মাসে পণ্য বাণিজ্যের কাজ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াতও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কিন্তু এর মধ্যেই অসন্তোষ দানা বেঁধেছে পরিবহণ শ্রমিক ও ট্রাক চালক খালাসিদের মধ্যে। অভিযোগ, ‘হ্যান্ড কুলি’ বা পরিবহণ শ্রমিকদের বন্দর এলাকায় কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যেসব ট্রাক চালক, খালাসি পণ্য নিয়ে বেনাপোলে যাচ্ছেন, তাঁদের পণ্য খালি না হওয়া পর্যন্ত এ দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বন্দরে মালপত্র বহনের কাজে যুক্ত আছেন শ’চারেক শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, মূলত বিএসএফ, অভিবাসন ও ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি তাঁদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করা যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। রোগীরাও থাকেন। শ্রমিকেরা তাঁদের মালপত্র বহন করে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। বিনিময়ে টাকা পেতেন। মালপত্র নিয়ে তাঁরা যাত্রীদের সঙ্গে অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের মধ্যে ঢুকতেন। সেখানে মালপত্র পরীক্ষা করিয়ে তা নিয়ে বেরিয়ে আসতেন। এখন শ্রমিকদের অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের মধ্যে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নো ম্যানস ল্যান্ড পর্যন্ত যেতে দিচ্ছে না বিএসএফ।
অভিযোগ রয়েছে ট্রাকচালকদেরও। তাঁদের দাবি, পণ্য খালি হতে দেরি হলে চালক, খালাসিরা বেনাপোলে ট্রাক রেখে এ দেশে চলে আসতেন। কারণ, বেনাপোলে খাওয়া-থাকা, পানীয় জল ওষুধ শৌচাগারের অভাব রয়েছে। এখন ফিরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন না ট্রাক চালকেরা। মালপত্র ওঠানো, নামানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের বেনাপোলেই থাকতে হচ্ছে। কখনও কখনও অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১০-১৫ দিন পর্যম্ত। বাড়ছে দুর্ভোগ। পেট্রাপোল অভিবাসন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশিকা আমরা মেনে চলছি। আমাদের করণীয় কিছু নেই। বিএসএফ এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে। তাদের বলা হয়েছে, কেউ যেন ঢুকতে না পারেন।’’ অভিবাসন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, অতীতে বন্দরের নিরাপত্তা দেখত পুলিশ। পরবর্তী সময়ে ‘ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন’ দায়িত্ব নিয়েছে। তারপর থেকেই নিরাপত্তার কারণে শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁরা চলছেন নিয়ম মেনে। কমিটির দাবি, হয় আগের মতো ট্রাক চালকদের এ দেশে আসতে দেওয়া হোক। নয়তো ২৪ ঘন্টার মধ্যে পণ্যখালি করার ব্যবস্থা করা হোক। আপাতত মিলছে না সমাধানসূত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন