হাবরার এই হলেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।
দু’পাশে ফুট চারেকের কাঠের দেওয়াল। মধ্যে ছোট-ছোট খোপ। মাঝে দু’জনের বসার জায়গা। বাইরে থেকে কেউ কিছু ঠাওর করতে পারবে না। মূলত মফফ্সলের কিছু কিছু সিনেমা হলে এমন আসনের নামই ‘বক্স।’ আর একেই কেন্দ্র করেই যত গোলমাল। যা নিয়ে বুধবার সরগরম হল উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা।
হাবরার একটি সিনেমা হলে এমনই এক বক্সে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরেই বুধবার এলাকার দু’টি সিনেমা হলে হানা দেয় হাবরা থানার পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, দু’টি সিনেমা হলের বক্স থেকে ২৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে ৮ কলেজ পড়ুয়া ছাড়াও এক নাবালিকাও রয়েছে।
মাস ছয়েক আগেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহরে চন্দ্রকোনা রোডের একটি সিনেমা হলে বক্সের মধ্যে এক যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই যুবতী মারাও যায়। তা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। এ বার একই রকম ভাবে হাবরাতেও বক্সের মধ্যে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল।
হাবরা থানার পুলিশ জানিয়েছে, অশোকনগরের ঈশ্বরীগাছার বাসিন্দা ১৬ বছরের ওই নাবালিকার সঙ্গে বছর খানেক ধরে সম্পর্ক ছিল দেগঙ্গার সহায়-কুমরাপুরের বাসিন্দা ২০ বছরের এক যুবকের। মঙ্গলবার হাবরা থানায় দায়ের করা অভিযোগে নাবালিকা জানিয়েছে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাবরার একটি সিনেমা হলে নিয়ে যায় ওই যুবক। তারপর বক্সের মধ্যে একাধিকার তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা হয়। মঙ্গলবার রাতেই দেগঙ্গার বাড়ি থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার বারাসত আদালতে তোলা হলে তাকে ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
বক্স-কাণ্ড
• মাস ছয়েক আগে ঘাটালে একটি সিনেমা হলের বক্সের মধ্যে এক যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই যুবতী মারা যান।
• হাবরার দু’টি সিনেমা হলের বক্স থেকে বুধবার ২৩ জন ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে ৮ জন কলেজ পড়ুয়া ও এক নাবালিকা।
• ধৃতদের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে অশালীন আচরণের মামলা হয়েছে।
একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা হলেও প্রথমেই কেন এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়নি প্রশ্ন করলে মেয়েটির পরিবারের বক্তব্য, ওই যুবক মেয়েটিকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সে বিয়ে করার ব্যাপারে বেঁকে বসে। তারপরেই মেয়েটি পরিবারের কাছে সব খুলে বলে। যুবকটির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি সহবাসের ধারায় অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
এরপর বুধবার দুপুরে হাবরার ওই সিনেমা হলটি ছাড়াও আরও একটিতে হানা দেয় পুলিশ। বক্স থেকে ধৃত ২৩ জনের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে অশালীন আচরণ করার দায়ে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে হাবরা ছাড়াও হরিণঘাটা, দেগঙ্গা, দত্তপুকুর, এবং আমডাঙা এলাকার কয়েকজনও রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আগে অন্য ধরনের অভিযোগ আছে কী না তাও সংশ্লিষ্ট থানাগুলির কাছে জানতে চেয়েছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে আমডাঙার এক নাবালিকার পরিবারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
যে সিনেমা হলটিকে নিয়ে এই ঘটনা তার মালিক শিবু দে এ দিন দাবি করেন, ‘‘আমার সিনেমা হলে বক্স নেই। ওই ধরনের কাজকর্মও হয় না।’’ যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ওই হলের বক্স থেকে এদিনও আপত্তিকর অবস্থায় কয়েক জনকে ধরা হয়েছে। তা হলে হল মালিকের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নে পুলিশের বক্তব্য, মেয়েটি জানিয়েছে, সে স্বেচ্ছায় সিনেমা হলে গিয়েছিল। মালিকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তবে তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।