কাজটা ভাল করিনি, এখন বলছে মেহের

অশোকনগরের ন’পাড়ার মহিষাপোতায় বাড়ি মেহেরের। বছর সতেরোর ছেলেটি জানায়, পড়াশোনায় তার মন ছিল না। কাজ করে তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল চোখে। বাড়িতে লুকিয়ে স্কুল পালিয়ে সেলাইয়ের কাজ শিখতে শুরু করে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪৬
Share:

পালিয়ে ফেরা। পরিবারের সঙ্গে মেহের। ছবি: সুজিত দুয়ারি

বাবা-মায়ের ইচ্ছে, ছেলে মন দিয়ে লেখাপড়াটাই করুক। কিন্তু নবম শ্রেণির ছেলের চোখে তখন ‘বড় হওয়ার’ ঘোর লেগে গিয়েছে। ধৈর্য ধরার সময় কোথায় তার।

Advertisement

একদিন কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে সে বন্ধুর সঙ্গে পাড়ি দেয় মুম্বইয়ে। দু’বছর সেখানে কাটিয়ে, নানা অভিজ্ঞতার পরে বাড়ির জন্য মন কেমন করতে শুরু করে ছেলের। শেষমেশ ফিরে এসেছে মেহের আলি। ছেলেকে আর চোখের আড়াল করতে চান না মা কাশ্মীরা। বললেন, ‘‘ওর যা খুশি করুক। পড়তে চাইলে পড়ুক। কাজ করতে চাইলে তা-ই করক। আর কিছুতে বাধা দেব না। কিন্তু এ ভাবে বুক খালি করে যেন চলে না যায়।’’

অশোকনগরের ন’পাড়ার মহিষাপোতায় বাড়ি মেহেরের। বছর সতেরোর ছেলেটি জানায়, পড়াশোনায় তার মন ছিল না। কাজ করে তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল চোখে। বাড়িতে লুকিয়ে স্কুল পালিয়ে সেলাইয়ের কাজ শিখতে শুরু করে।

Advertisement

ছেলে নিয়মিত স্কুল যাচ্ছে না জানতে পেরে বকাবকি করেছিলেন বাবা-মা। এমন একটা সুযোগই তো খুঁজছিল ছেলে। ২০১৬ সালের ৩০ জুন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে সে।

চারি দিকে খোঁজ খোঁজ। থানায় ডায়েরি হয়। কিন্তু ততক্ষণ এক বন্ধুর সঙ্গে মুম্বইয়ের ট্রেনে উঠে বসেছে মেহের। সঙ্গে হিজলিয়া গ্রামের সাদ্দাম হোসেন নামে এক বন্ধু। সাদ্দাম সেলাইয়ের কাজ করত।

এ দিকে, ট্রেনের টিকিট কাটার পয়সা ছিল না কারও কাছে। পথে টিকিট পরীক্ষকের হাতে সাদ্দাম ধরা পড়ে। ভয়ে সিটের নীচে লুকিয়ে ছিল মেহের। কোনও রকমে মুম্বই পৌঁছে এ দিক ও দিক ঘুরতে ঘুরতে দুই কিশোরের আলাপ হয়ে যায় মুর্শিদাবাদের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে। তাঁদের সহযোগিতায় একটি ব্যাগের দোকানে কাজও জুটিয়ে নেয় মেহের। তবে বেতন মিলত না। শুধু থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে কাজ।

তাতেই খুশি ছিল ছেলেটা। নতুন জায়গা আর মানুষ দেখার নেশায় বিভোর। কিন্তু কিছু দিন আগে জন্ডিসে পড়ে। জ্বর গায়ে দুর্বল শরীরে মনে পড়ে মায়ের আঁচলের গন্ধ। মনে পড়ে বাবার স্নেহ। বোনের সঙ্গে খুনসুটি। বাড়ি ফেরার জন্য আকুলি-বিকুলি করতে থাকে ছেলেটা।

দোকান কর্তৃপক্ষ বুঝেছিলেন, মেহেরের বাড়ি ফেরাই উচিত। হাজার খানেক টাকা আর ট্রেনের টিকিট ধরান মেহেরের হাতে।

বৃহস্পতিবার হঠাৎ বাড়িতে হাজির সেই ছেলে। মা কাশ্মীরা, বাবা আজগর— দু’জনেই কেঁদে ভাসিয়েছেন ছেলেকে ফিরে পেয়ে। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে ডেকে ইতিমধ্যেই দাওয়াত দিয়েছেন। শনিবার ছেলেকে নিয়ে তাঁরা এসেছিলেন থানায়। ‘নিখোঁজ ডায়েরি’ ফিরিয়ে নিতে হত যে। পুলিশ কর্তারাও ‘কেস’ বন্ধ করতে পেরে খুশি। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘অনেকে নিখোঁজ ডায়েরি করে যান। আমরা খোঁজ-খবর করি। অনেকে পরে ফিরে এলেও পরিবারের লোকজন আর জানান না। এ ক্ষেত্রে ছেলেটির বাবা-মা দায়িত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। আর ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরতে দেখে আমাদেরও ভাল লাগছে।’’ মেহের বলে, ‘‘ভেবে দেখলাম, দেশ ঘোরার সময় এখনও ঢের পাব। টাকাও রোজগার করতে পারব। কিন্তু বাবা-মাকে ছেড়ে ও ভাবে যাওয়াটা ঠিক হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন