ত্রিকোণ প্রেমের জেরে খুন করে মাটি চাপা দেওয়া হল যুবককে

ত্রিকোণ প্রেমের জেরে এক যুবককে খুনের ঘটনা ঘটল বাগদার রাঘবপুর গ্রামে। ওই এলাকার যুবক কার্তিক বারুই (২৩) শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। শনিবার সকাল থেকেই শুরু খোঁজাখুঁজি। ওই রাতেই কার্তিকের বাবা পেশায় দিনমজুর তারকবাবু বাগদা থানায় ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কার্তিকের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় সুকান্ত রায় ও অভিজিত্‌ রায়কে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাগদা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০১:২৪
Share:

উদ্ধার করা হচ্ছে কার্তিকের দেহ।

ত্রিকোণ প্রেমের জেরে এক যুবককে খুনের ঘটনা ঘটল বাগদার রাঘবপুর গ্রামে।

Advertisement

ওই এলাকার যুবক কার্তিক বারুই (২৩) শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। শনিবার সকাল থেকেই শুরু খোঁজাখুঁজি। ওই রাতেই কার্তিকের বাবা পেশায় দিনমজুর তারকবাবু বাগদা থানায় ডায়েরি করেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কার্তিকের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় সুকান্ত রায় ও অভিজিত্‌ রায়কে। পুলিশ রবিবার সকালে আটক করে সুকান্তকে। পুলিশের দাবি সুকান্ত জেরায় জানায়, কার্তিককে তারাই খুন করে বাগানে পুঁতে রেখেছে।

Advertisement

সেই মতো রবিবার বেলা ২টো নাগাদ বনগাঁর এসডিপিও বিশ্বজিত্‌ মাহাতো, গোপালনগর, গাইঘাটা ও বাগদা থানার ওসি, গাইঘাটার সিআই পার্থ সান্যাল বাহিনী নিয়ে আসেন নিয়ে স্থানীয় হুলোরঘাট গ্রামে। সঙ্গে ছিলেন এক জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, কলাবাগানে রক্তের দাগ। পড়ে আছে মদ খাওয়ার প্লাস্টিকের গ্লাস। পুলিশ গোটা প্রক্রিয়াটি ভিডিওগ্রাফি করে। সুকান্ত দেখিয়ে দেয়, কোথায় কার্তিককে পুঁতে রাখা হয়েছে। সেই মতো মাটি খঁুড়ে উদ্ধার করা হয় দেহ। ময়না-তদন্তের জন্য তা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিশ্বজিবাবুত্‌ বলেন “এক বিবাহিত মহিলার সঙ্গে কার্তিকের সম্পর্কের জেরেই অভিজিত্‌ রায় ও সুকান্ত রায় নামে দুই যুবক তাঁকে খুন করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে।”

পুলিশ জানায় সুকান্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা ও তাঁর স্বামীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূল অভিযুক্ত অভিজিতের খোঁজ চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কার্তিকের সঙ্গে বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক ছিল স্থানীয় কমলাবাস এলাকার বাসিন্দা ওই বধূর। তিনি সম্পর্কে কার্তিকের বৌদি। তা নিয়ে গ্রামে জানাজানিও হয়। মাস ছ’য়েক আগে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন পেশায় দিনমজুর কার্তিক। সুকান্তর দাবি, বৌদির সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন কার্তিক। যদিও পুলিশের দাবি, ওই মহিলা জেরায় জানিয়েছেন, অন্য এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কার্তিক। কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে কার্তিকের বাড়ি থেকে তাঁর বৌদির সঙ্গে মেলামেশা করতে বারণ করা হয়েছিল। মহিলার স্বামীও আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারপর থেকে দু’জনকে এক সঙ্গে বড় একটা দেখাও যেত না বলে জানিয়েছেন পাড়া-পড়শিরা।

খুনের অভিযোগে ধৃত সুকান্ত।

এ দিকে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কমলাবাস গ্রামের বাসিন্দা অভিজিতেরও। গোটা ঘটনায় কার্তিক ঢোকার আগে থেকে সেই সম্পর্ক। মহিলা সম্পর্কে অভিজিতেরও বৌদি। সম্প্রতি তিনি অভিজিত্‌কে এড়িয়ে চলছিলেন। যা ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেনি ওই যুবক।

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে বৌদিকে সাইকেলে চাপিয়ে এলাকায় ঘুরছিলেন কার্তিক। তা চোখে পড়ে অভিজিতের। রাগের মাথায় তখনই কার্তিককে খুনের ছক কষে সে।

ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে তার আত্মীয় সুকান্তও। তাকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় কার্তিকের সঙ্গে দেখা করে অভিজিত্‌। দত্তফুলিয়া থেকে মদ কিনে সকলে হুলোরঘাট গ্রামের একটি কলা বাগানে বসে। পুলিশের দাবি, জেরায় সুকান্ত জানিয়েছে, মদ খেয়ে কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ে কার্তিক। সে সময়ে একটি হাতুড়ি দিয়ে অভিজিত্‌ পিছন থেকে কার্তিকের কানের উপরে বার কয়েক ঘা মারে। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর তাঁকে টেনে পাশের একটি আকাশমণির বাগানে নিয়ে গিয়ে মাটিতে পুঁতে দেয় অভিজিতরা।

কার্তিকের মামার বাড়ি কমলাবাস গ্রামে। রবিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বাবা তারক ও মা শীলাদেবী কেঁদে ভাসাচ্ছেন। প্রতিবেশীদের অনেকের চোখেও জল। শীলাদেবী বলেন, “কেন খুন করল ওকে। দোষীদের চরম শাস্তি চাই।” পুলিশ যখন মাটি খুঁড়ছে তারকবাবু হাজির। বাবার সামনেই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছিল। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। দেহ উপরে তুলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তারকবাবু। জ্ঞানও হারান।

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন