ওষুধ খাওয়ার নিয়ম না বোঝায় চিকিৎসক ধমকালেন রোগীকে

দৃশ্য-১। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল আউটডোরের পুরুষ বিভাগের ৩ নম্বর এবং শিশু বিভাগের ৬ নম্বর ঘরে গিয়ে দেখা গেল, কোনও চিকিৎসক নেই। কিন্তু বাচ্চা কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মায়েরা।

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪৬
Share:

সকাল সাড়ে ১১টা। শিশু বহির্বিভাগের ঘর ফাঁকা।

দৃশ্য-১। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল আউটডোরের পুরুষ বিভাগের ৩ নম্বর এবং শিশু বিভাগের ৬ নম্বর ঘরে গিয়ে দেখা গেল, কোনও চিকিৎসক নেই। কিন্তু বাচ্চা কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মায়েরা।

Advertisement

ক্যানিংয়ের রায়বাঘিনির মিনতি নস্কর আধ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরেও চিকিৎসকের দেখা পেলেন না। তিনি বলেন, “সকাল থেকে আমার ছেলের পেটে ব্যথা হচ্ছিল। তাই ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম ডাক্তারবাবু এখনও আসেননি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই সময় আলমগির হোসেনের বসার কথা ছিল। কিন্তু এক সদ্যোজাত শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি তাকে দেখতে গিয়েছেন।” সে কারণে ওই সময় ঘরটি ফাঁকা ছিল। কিন্তু শিশু বিভাগের মতো একটি ওয়ার্ডে ডাক্তার না থাকায় ভুগতে হচ্ছে কত শিশুকে।

দৃশ্য-২। পুরুষ বিভাগের ৩ নম্বর রুম। কয়েক জন পুরুষ টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা থেকে হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে এসেছেন গোলাম আলি সর্দার। বললেন, “প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে শুনি, ডাক্তারবাবু চলে গিয়েছেন। তাই আজ আর দেখানো হবে না আবার কাল আসতে হবে।” হাসপাতালের দু’এক জন কর্মী জানালেন, “আশিস ট্যান্ডন নামে এক চিকিৎসকের ডিউটি ছিল। কিন্তু এ দিন রোগীর চাপ একটু কম থাকায় উনি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়েছেন।”

Advertisement

দৃশ্য-৩। জরুরি বিভাগে বিমান সরকার নামে একজন চিকিৎসক খুব চিৎকার-চেঁচামেচি করছিলেন। সামনে যেতেই দেখা গেল, এক রোগীকে বকাবকি করছেন। ওষুধ খাওয়ার নিয়মাবলি বুঝতে না পারায় বকুনি খেতে হচ্ছিল ওই রোগীকে। আবদুল রহিম মোল্লা নামে ওই রোগী পরে বললেন, “ওষুধের ব্যপারে একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম না। তাই ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু এতে উনি আমার উপরে রেগে গিয়ে চিৎকার করছিলেন।”

এক্স-রে রুমের সামনে বেশ ভিড় চোখে পড়ল। বিভাগটি তিন জন সামলান। কিন্তু এক জন এ দিন ছুটিতে থাকায় ওই দু’জনকেই ভিড় সামলাতে হচ্ছিল। রোগীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই।

এই হাসপাতালটিতে সুন্দরবন প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও বহু মানুষ আসেন। কিন্তু এটি একটি মহকুমা হাসপাতাল হওয়ার পরও সমস্যা রয়েছে প্রচুর। এর পরিষেবা ও পরিকাঠামোর দিক দিয়ে মানুষের প্রচুর অভিযোগও রয়েছে। হাসপাতালে এখনও একটি বেডে দু’জন করে রোগী রাখা হয়। রোগীদের ভিড় বাড়লেও বাড়েনি বেডের সংখ্যা। মাঝের দিকে কিছু দিনের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা করে চিকিৎসকদের অনকল ডিউটি চালু হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।

আর হবে নাই বা কেন? হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, এখন ওই হাসপাতালে মাত্র ২৩ জন চিকিৎসক, ৩২ জন নার্স এবং ১০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং দু’জন সাফাই কর্মী আছেন। রোগীর চাপের তুলনায় যা যথেষ্ট নয়। সুপারকে ইন্দ্রনীল সরকারকে দেখা গেল ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে রোগী দেখছেন। তিনি বলেন, “কিছু সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেও আমরা মানুষের পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।” চিকিৎসক ট্যান্ডন কেন তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়েছেন, তা জানতে চাইলে সুপার বলেন, “এ বিষয়ে আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন