কটূক্তি র প্রতিবাদ, বালককে অপহরণের চেষ্টা

অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বয়স লাগে না, বুঝিয়ে দিল রাকিবুল মোল্লা। চোখের সামনে পাড়ার দুই দিদির সঙ্গে মোটরবাইকে চড়া যুবক অসভ্যতা করছে, তা বুঝতে সময় লাগেনি বাদুড়িয়ার এই দশ বছরের বালকের। ফুঁসে উঠে বলেছিল, “ওদের বিরক্ত করো না। চলে যাও এখান থেকে।” অভিযোগ, তাতেই খেপে গিয়ে বালককে তুলে নিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরবাইক চালিয়ে দেয় আলি হাসান নামে ওই যুবক। মোটরবাইক থেকে ছিটকে পড়ে মাথায় চোট পায় রাকিবুল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৩
Share:

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রাকিবুল। রয়েছেন বাবা ও দিদিও।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বয়স লাগে না, বুঝিয়ে দিল রাকিবুল মোল্লা। চোখের সামনে পাড়ার দুই দিদির সঙ্গে মোটরবাইকে চড়া যুবক অসভ্যতা করছে, তা বুঝতে সময় লাগেনি বাদুড়িয়ার এই দশ বছরের বালকের। ফুঁসে উঠে বলেছিল, “ওদের বিরক্ত করো না। চলে যাও এখান থেকে।” অভিযোগ, তাতেই খেপে গিয়ে বালককে তুলে নিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরবাইক চালিয়ে দেয় আলি হাসান নামে ওই যুবক। মোটরবাইক থেকে ছিটকে পড়ে মাথায় চোট পায় রাকিবুল।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার পিয়ারা তেঘরিয়া হাইস্কুলের সামনে এই ঘটনার পরে পুলিশ আলিকে গ্রেফতার করেছে। রাকিবুল বসিরহাট হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তার মাথায় গুরুতর চোট লেগেছে। মাঝেমধ্যে জ্ঞান চলে যাচ্ছে। হাত-পা, শরীরের নানা জায়গায় ছড়ে গিয়েছে।

রাকিবুল এ দিন পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে গিয়েছিল পিয়ারা তেঘরিয়া স্কুলে। স্কুল থেকে বেরনোর সময়ে দেখে, পাড়ার দুই দিদি স্কুলের দিকে আসছে। তারা পড়ে সপ্তম ও নবম শ্রেণিতে। বালকের দাবি, ‘‘স্কুল থেকে খানিক দূরে মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা (আলি) দিদিদের খারাপ কথা বলছিল। দিদিরা যখন পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে, ও ওদের ব্যাগ ধরে টানাটানি করে।”

Advertisement

অভিযুক্তকে স্কুল থেকে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময়।

রাকিবুলের সঙ্গে ছিল তার সমবয়সী তিন বন্ধু। তাদের অন্যতম ইনরান মোল্লা বলে, “রাকিবুল দিদিদের বিরক্ত করতে বারণ করতেই লোকটা ওকে গালি দেয়। তার পরে জোর করে মোটরবাইকে বসিয়ে সাংঘাতিক জোরে গাড়ি চালিয়ে দেয়।” রাকিবুলের পরিচিত নবম শ্রেণির ছাত্রীটির অভিযোগ, “আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় রাকিবুলকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল লোকটা।” রাকিবুল বলে, “লোকটা এত জোরে মোটরবাইক চালাচ্ছিল যে ভয় পাচ্ছিলাম, পড়ে যাব। পড়ে গিয়ে মাথায় লাগল।”

মোটরবাইক থেকে রাকিবুলের ছিটকে পড়ার ঘটনাটা চোখে পড়ে পিয়ারা তেঘরিয়া স্কুলের এক শিক্ষকের। তিনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আলি হাসানকে থামতে বাধ্য করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, কেন সে রাকিবুলকে মোটরবাইকে নিয়ে যাচ্ছিল জনতা জানতে চাইলে আমতা-আমতা করতে থাকে আলি। বসিরহাটের ধলতিথার বাসিন্দা এই যুবক পেশায় দর্জি।

সে বিবাহিত। আলির জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে জনতা শুরু করে মারধর। প্রাণে বাঁচাতে কয়েকজন আলিকে নিয়ে গিয়ে রাখেন স্কুলের একটি ঘরে।

ইতিমধ্যে রটে যায়, আলির কিছু সঙ্গী টাকা দিয়ে ব্যাপারটা মিটমাট করার চেষ্টা করছে। আগুনে ঘি পড়ে। স্কুলের গেট ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আলির বিরুদ্ধে অপহরণের চেষ্টা, খুনের চেষ্টা এবং শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। পিয়ারা তেঘরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম দে বলেন, “রাকিবুল যে সাহস দেখিয়েছে, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।”

রাকিবুলের বাবা মনিরুল মোল্লা বলেন, “আমার ছোট মেয়ে ওই স্কুলে নবম শ্রেণিতেই পড়ে। দিদির মতো কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার হতে দেখে চুপ থাকতে পারেনি রাকিবুল। বাবা হিসেবে ওর জন্য গর্ব হচ্ছে। আবার ভয়ও পাচ্ছি।”

ছবি: নির্মল বসু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement