ঘোজাডাঙা সেতু পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে পণ্যবাহী ট্রাক। ছবি: নির্মল বসু।
তৃণমূল নয়, তৃণমূলের নাম করে একটা চক্র সিন্ডিকেট করে লরি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছে বলে দাবি করলেন বসিরহাটের তৃণমূল নেতা তথা ফুটবলার দ্বীপেন্দু বিশ্বাস। তৃণমূলের বদনাম করতেই ওই চক্র সীমান্তের রাস্তায় লরি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছে বলে তাঁর দাবি। তাঁর বক্তব্য, “ঘটনা জানার পর এ সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” কেবল চাঁদা তোলা বন্ধ করাই নয়, যত দ্রুত সম্ভব ঘোজাডাঙা সীমান্ত এলাকায় কত শ্রমিক আছে তার হিসাব বসিরহাট থানার আই সি-র কাছে জমা দেওয়ার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দীপেন্দুবাবু।
বসিরহাটের ঘোজাডাঙা দিয়ে বাংলাদেশে যাওয়া বাণিজ্যের লরি থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে এর পিছনে শাসক দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে প্রশাসনের একাংশও জড়িত বলে দাবি তাঁদের। সিন্ডিকেট করে চালকদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে সম্প্রতি এই পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর থেকে আপাতত বসিরহাটের ইছামতী সেতু থেকে ঘোজাডাঙা পর্যন্ত ওল্ড সাতক্ষীরা রোডে তোলা আদায় বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় গেলে রোজকার মতো রাস্তায় রফতানির লরি আটকে সিন্ডিকেটের চাঁদার জুলুমের পরিচিত ছবি চোখে পড়েনি। তবে এটা যে সাময়িক স্বস্তি তাও জানাতে ভোলেননি লরিচালকরা। গিয়াসুদ্দিন মোল্লা নামে এক লরিচালকের কথায়, “আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখার জন্য দিন কয়েক চাঁদার জুলুমবাজি বন্ধ রয়েছে। শাসকদলের দিকে আঙুল ওঠায় তারাও কিছুটা অস্বস্তিতে। তবে কয়েকদিন পরে দেখবেন, ফের সব শুরু হয়ে গিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, লরি আটকে তোলাবাজির অত্যাচার তো আছেই, রাতে সীমান্তে রাস্তায় লরি রাখলেও তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ট হতে হয় লরিচালকদের। টাকা না দিলে লুঠপাট চলে।
তবে রফতানির লরি আটকে তোলাবাজি নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা নস্যাত্ করেছে ঘোজাজাঙা সীমান্তের শ্রমিক সংগঠনগুলি। এ ব্যাপারে সংগঠনগুলি জানিয়েছে, এই সীমান্তে এক সময় যে সব ১০ বা তার বেশি চাকার পণ্যবাহী লরি আসত সেগুলি থেকে সীমান্তের এ পারে পণ্য খালাস করা হত। পরে সেই পণ্য আবার ছোট লরিতে করে সীমান্তের ওপারে চলে যেত। এই সব পণ্য লরি থেকে ওঠানো-নামানোর জন্য কয়েকশো শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে অবস্থাটা পাল্টে যায়। তখন থেকে ১০-১২ চাকার পণ্যবাহী সমস্ত ট্রাক সরাসরি বাংলাদেশ চলে যাওয়ায় এ পারে লোডিং-আনলোডিং বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কয়েকশো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।
বসিরহাট-ঘোজাডাঙা লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়ন (আইএনটিটিইউসি)-এর সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, ‘‘২০১৩-র জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাস ধরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলে। তার পর জেলা ও মহকুমাপ্রশাসন, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিক ইউনিয়নএই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে কর্মচ্যুত শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় তাঁদের মাসিক একটা ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেইমত ঠিক হয় দশ বা তার বেশি চাকার বিশেষ পণ্যের লরি থেকে ৬০০ টাকা করে নিয়ে তহবিল গঠন করা হবে। সেই থেকে ওই তহবিল থেকেই কর্মহীন ওই শ্রমিকদের সাহায্য করা হচ্ছে। ফলে আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিটা লরি থেকে টাকা তোলার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা একেবারেই মিথ্যা।” তাঁর আরও দাবি, “সীমান্তে যারা সিন্ডিকেটের নাম করে মস্তানি-তোলাবাজি করে লরি থেকে টাকা আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে সব সময়েই ইউনিয়ন সোচ্চার।” পাশাপাশি তিন বলেন, “দিনে খুব বেশি হলে ৩০-৩৫টা বড় ট্রাক থেকে তহবিলের টাকা তোলা হয়। ইতিমধ্যে প্রায় তিনশো কর্মহীন শ্রমিকের তালিকা বসিরহাট থানা ও শ্রম দফতরে দেওয়া হয়েছে।”
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কর্মহীন শ্রমিকদের সাহায্য করতে তাঁরা রাজি। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে জোর করে বেশি টাকা দাবি করা হচ্ছে। কখনও কখনও রাজি না হলে লরিচালক থেকে খালাসিদের মারধর করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক কড়া পদক্ষেপ জরুরি। যদিও এতে কতটা সুরাহা হবে তা নিয়ে সংশয়ে ব্যবসায়ী সংগঠন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের এক কর্তা জানান, তোলাবাজদের অনেকেই শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় পুলিশ-প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে না। বছরের পর বছর ধরেই এই ট্র্যাডিশন চলছে। অবস্থার পরিবতর্ন ঘটাতে হলে চাই নিরপেক্ষ প্রশাসন।