টাঙ্গির কোপে খুন মামা, পালিয়ে প্রাণে বাঁচল ভাগ্নি

টাঙ্গির কোপে ধর থেকে মুণ্ড প্রায় আলাদা হয়ে ঝুলছিল। দূর থেকে সে দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল বছর দশেকের ভাগ্নি। আততায়ীরা তাকেও ধাওয়া করে। কোনও মতে পালিয়ে বেঁচেছে মেয়েটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৫
Share:

এই মাচার উপরে ফেলেই খুন করা হয় মনসুরকে। ছবি: নির্মল বসু।

টাঙ্গির কোপে ধর থেকে মুণ্ড প্রায় আলাদা হয়ে ঝুলছিল। দূর থেকে সে দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিল বছর দশেকের ভাগ্নি। আততায়ীরা তাকেও ধাওয়া করে। কোনও মতে পালিয়ে বেঁচেছে মেয়েটি।

Advertisement

সোমবার ভোরে ঘটনাস্থল হাসনাবাদের জলসেরিয়ার গ্রামের চড়পাড়া। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম মনসুর আলি গাজি (৫০)।

পুলিশ জানতে পেরেছে, দিন পনেরো আগে স্থানীয় দুষ্কৃতী সরিফুল মণ্ডল মনসুরের এক বিবাহিতা বোনের সঙ্গে অভব্য আচরণ করে। হাত ধরে টানাটানি করে। শাড়ি ছিঁড়ে দেয়। ওই মহিলার মেয়েকেও মারধর করে। শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের হয়নি থানায়। কিন্তু ঘটনা জানতে পেরে সরিফুলকে বেধড়ক পেটান মনসুর। তখনই ‘দেখে নেবে’ বলে শাসিয়ে গিয়েছিল সরিফুল। তারপর থেকে গ্রামে টাঙ্গি হাতে সরিফুলকে দেখেছেন অনেকেই। মনসুরের উপরে হামলা করবে বলে ওই দুষ্কৃতী প্রকশ্যেই হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছিল। সোমবার মনসুরের উপরে হামলার সেটাই অন্যতম কারণ বলে অনুমান পুলিশের। সরিফুল ছাড়াও কালাম মণ্ডল ও ভুট্টো সর্দার নামে আরও দুই দুষ্কৃতী খুনের ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে পুলিশের কাছে। সকলের খোঁজ চলছে।

Advertisement

তবে মনসুরের বিরুদ্ধে সরিফুলের পুরনো রাগ থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারদের একাংশ। মনসুরের বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতি-তোলাবাজির নানা অভিযোগ আছে পুলিশের খাতায়। সরিফুল, ভুট্টো, কালামদের নামেও দুষ্কর্মের অভিযোগ আছে। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বছর দু’য়েক হল মনসুর অসামাজিক কাজকর্ম ছে়ড়ে ব্যবসাপত্র শুরু করেছিলেন। যা মেনে নিতে পারছিল না সরিফুলরা। সেই রাগেও প্রাণঘাতী হামলা হয়ে থাকতে পারে। পুরনো বিবাদের জেরেও হামলা চালানো হতে পারে মনসুরের উপরে। ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কারণ আছে বলে গ্রামের কিছু লোকের দাবি। তেমন কিছু অবশ্য মনে করছেন না তদন্তকারীরা। মনসুরের ১৭ শতক জমির দখল নিয়ে সরিফুলদের সঙ্গে তাঁর অশান্তি ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। খুনের পিছনে ঠিক কোন ঘটনা ইন্ধন জুগিয়েছে, তা আততায়ীদের ধরে জেরা করার পরেই স্পষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এক কর্তা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মনসুরের স্ত্রী-পুত্র থাকেন বারাসতের গোলাবাড়িতে। পাঁচ ও দশ বছরের দুই ভাগ্নিকে নিয়ে মেছোভেড়ির আলাঘরে রাতে ছিলেন মনসুর। রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য জেগেই কাটান মনসুর। ভোরের দিকে চোখ লেগে এসেছিল। আততায়ীরা তাঁকে ডেকে তোলেন। ঘর থেকে বেরোতেই টেনে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের মছোভেড়ির দিকে। বড় ভাগ্নি বাধা দিতে গেলে লাথি মেরে তাকে ভেড়িতে ফেলে দেওয়া হয়। মাচার উপরে চেপে ধরে টাঙ্গি দিয়ে মনসুরের গলায় দু’টো কোপ মারে হামলাকারীরা। মেয়েটি চিৎকার করে উঠলে তার দিকেও তেড়ে আসে অস্ত্র হাতে। ওই নাবালিকা পালিয়ে আসে। ছোট বোন তখনও অকাতরে ঘুমোচ্ছে আলাঘরে।

মনসুরের এক বোনের কথায়, ‘‘সময় মতো আমার মেয়েটা পালাতে পেরেছিল বলে প্রাণে বেঁচেছে। কিন্তু এখন ওকে কী ভাবে রক্ষা করব, সেটাই ভাবছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন