তৃণমূল কর্মী খুনের মূল চক্রী গয়সউদ্দিনই, দাবি পুলিশের

অশোকনগরের তৃণমূল কর্মী রফিক মণ্ডলের খুনের ঘটনায় মূল ষড়যন্ত্রকারী দলেরই সংখ্যালঘু সেলের নেতা গয়সউদ্দিন মণ্ডল, প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই মনে করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, গয়সউদ্দিনই নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ঠান্ডা মাথায় খুনের ছক কষে দিয়েছিল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

অশোকনগর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০১:২৪
Share:

অশোকনগরের তৃণমূল কর্মী রফিক মণ্ডলের খুনের ঘটনায় মূল ষড়যন্ত্রকারী দলেরই সংখ্যালঘু সেলের নেতা গয়সউদ্দিন মণ্ডল, প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই মনে করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, গয়সউদ্দিনই নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ঠান্ডা মাথায় খুনের ছক কষে দিয়েছিল। গয়সউদ্দিন-সহ পাঁচ জনকে ইতিমধ্যেই ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও সোমবার গয়সউদ্দিন দাবি করেছিল, খুনের ঘটনায় সে যুক্ত নয়। সে চক্রান্তের শিকার।

Advertisement

তবে নিহতের পরিবারের দাবি অনুযায়ী, খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবর রহমান। সে এখনও পলাতক। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রবিবার বিকেলে অভিযুক্ত মুজিবরের নির্মীয়মাণ একটি বাড়িতে বসেই রফিককে খুনের ছক কষা হয়েছিল।’’ যদিও দুষ্কৃতীদের খুনের পরিকল্পনার ‘হিট লিস্টে’ রফিক ছিলেন না। ছিলেন তাঁর দাদা নজরুল।

কিন্তু কেন খুনের পরিকল্পনা?

Advertisement

তদন্তকারী অফিসাররা জিনিয়েছেন, হাবরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে সামনেই উপনির্বাচন হওয়ার কথা। গয়সউদ্দিনের ইচ্ছে ছিল, নিজের স্ত্রীকে তৃণমূলের প্রার্থী করবে। কিন্তু সেই পথের কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন এলাকায় দীর্ঘদিন তৃণমূলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা নজরুল মণ্ডল ও তাঁর ভাই রফিক এবং তাঁদের পরিবারের আরও কয়েক জন ভাই। গয়সউদ্দিন বুঝতে পেরেছিল, নজরুলদের কোণঠাসা করতে না পারলে স্ত্রীকে দলীয় টিকিট দেওয়া সম্ভব হবে না। সে কারণেই রফিককে খুনের পরিকল্পনা করে সে।

খুনের পরিকল্পনায় কেন যুক্ত হল এলাকায় সিপিএম কর্মী হিসাবে পরিচিত মুজিবরেরা?

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মুজিবরেরাও সম্প্রতি গয়সউদ্দিনের মাধ্যমে তৃণমূলে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু নজরুল-রফিকদের কাছ থেকে বাধা আসায় তা আর হয়ে ওঠেনি। মুজিবরও পথের কাঁটা সরাতে গয়সউদ্দিনকে সাহায্য করেছে।

কে এই গয়সউদ্দিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর আটত্রিশের গয়সউদ্দিনের বাড়ি ওই এলাকার আসুদি গ্রামে। অতীতে তাকে এলাকার মানুষ সিপিএম সমর্থক হিসাবেই চিনতেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কিছু দিনের মধ্যেই সে অশোকনগরের তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তৃণমূল পরিচালিত অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অস্থায়ী কর্মীর কাজও জুটিয়ে নেয়। তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, অশোকনগর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সমীর দত্তের বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসাবে এলাকায় গয়সউদ্দিনের পরিচিতি রয়েছে। পুরসভায় কাজ পাওয়ার সময়ে সমীরবাবুই পুরপ্রধান ছিলেন। যদিও মঙ্গলবার সমীরবাবু বলেন, ‘‘ওই সময়ে পুরসভায় মোট একশোজন অস্থায়ী কর্মী নেওয়া হয়েছিল। গয়সউদ্দিন তার মধ্যে একজন ছিলেন। আর পুরসভায় যারা কাজ করেন, তাদের সকলের সঙ্গেই আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।’’ গয়সউদ্দিনের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। আইন আইনের পথেই চলবে।’’ এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, এলাকায় রীতিমতো

দাদাগিরি চালাত গয়সউদ্দিন। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন তাঁকে অনেকেই। নিজের রীতিমতো ‘বাহিনী’ আছে গয়সের। কিন্তু নজরুল-রফিকদের জন্য নাদুড়িয়া এলাকায় সে দাঁত ফোটাতে পারছিল না। ফলে আক্রোশ বাড়ছিল।

যদিও খুনের ঘটনার পরে তৃমমূল নেতৃত্ব এবং নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনার দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এলাকায় সিপিএম সমর্থক হিসাবে পরিচিত মুজিবরের উপরে। মুজিবরের বৌমা গত পঞ্চায়েত ভোটে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সিপিএমের হয়ে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছেন। অতীতে এলাকার বিরোধীদের বাড়ি ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ রয়েছে মুজিবরের বিরুদ্ধে।

গয়সউদ্দিন গ্রেফতার হওয়ারও পরেও তৃণমূলের জেলা এবং স্থানীয় নেতৃত্বের একটি বড় অংশ জানতেন না, সে দলের সংখ্যালঘু সেলের অশোকনগর ১ ব্লক সভাপতি। ২৭ জুলাই তাকে ওই পদে বসানো হয়েছিল। এলাকার বিধায়ক ধীমান রায়ও অন্ধকারে ছিলেন। যা নিয়ে জেলার সংখ্যালঘু সেলের নেতাদের সোমবার সঙ্গে ধীমানবাবুর ঝগড়াও হয়েছে। গয়সউদ্দিনকে সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি করা হয়েছে, এই তথ্য কেন তাঁকে জানানো হয়নি, সে প্রশ্ন তুলে সরব হন ধীমানবাবু। খুনের ঘটনার পরেও ধীমানবাবু জানিয়েছিলেন, গয়সউদ্দিন দলের কেউ নয়। গোটা ঘটনার তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। নজরুলও জানিয়েছেন, ‘‘গয়সউদ্দিন সিপিএম করে বলে তাঁরা জানেন। তবে সে সিপিএমের কোন নেতার সঙ্গে মেলামেশা করে, তাঁদের জানা নেই। রবিবার সন্ধ্যায় দুষ্কৃতীরা প্রথমে নজরুলকেই আক্রমণ করে। তিনি পালিয়ে বাড়ি চলে এসে প্রাণে বেঁচে যান। ওই সময় খেত থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন রফিক। তাঁকে দুষ্কৃতীরা বাড়ির সামনে রাস্তায় বোমা মেরে খুন করে। বোমা-গুলির ঘায়ে জখম হয়েছেন তাঁর স্ত্রী ইছাতন-সহ বাড়ির পাঁচ জন। নজরুল মুজিবর, গয়সউদ্দিন-সহ দশ জনের বিরুদ্ধে ভাইকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন থানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন