ছোট গাড়ি পেরোলেও সমস্যা বড় গাড়ির ক্ষেত্রে। নিজস্ব চিত্র।
দিন কয়েক আগে কলকাতা থেকে বড় বাসে করে একদল পর্যটক বকখালিতে বেড়াতে আসেন। তাঁরা নামখানা ঘাটে এসে জানতে পারেন, হাতানিয়া দোহানিয়া নদীতে ভেসেলে করে বড় গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েন পর্যটককেরা। বাধ্য হয়ে প্রায় জনা ৫০ যাত্রী খেয়া পার হয়ে বেসরকারি বাসে করে পৌঁছন বকখালি পিকনিক স্পটে।
এ সমস্যা শুধু ওই পর্যটক দলের নয়। বেশ কিছু দিন ধরে হাতানিয়া দোহানিয়া নদীতে বড় গাড়ি পারাপারের ভেসেলটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটক— সকলেরই।
১৯৯৮ সাল থেকে নামখানা ও নারায়ণপুরের সংযোগের জন্য হাতানিয়া দোহানিয়া নদীতে গাড়ি পারাপারের জন্য ভেসেল চালু হয়। ব্যক্তিগত মালিকানায় ভেসেল চালু হলেও পরে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ থেকে ভূতল পরিবহণ নিগমের পরিচালনার পারাপার চলছে। নামখানা ব্লকের অধীনে রয়েছে ৭টি পঞ্চায়েত। এর মধ্যে নামখানা, শিবরামপুর, হরিপুর, মৌসুনি ও ফ্রেজারগঞ্চ— এই পাঁচটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের নিত্য প্রয়োজনে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার বা কলকাতায় যেতে হলে হাতানিয়া দোহানিয়া নদীপার হয়েই যেতে হবে। তা ছাড়া, ফ্রেজারগঞ্চ পঞ্চায়েতে রয়েছে বকখালি পর্যটন কেন্দ্র। কলকাতা থেকে ওই পর্যটন কেন্দ্রটি কাছাকাছি হওয়ায় সারা বছর ধরে পর্যটকেরা বকখালিতে বেড়াতে আসেন। ওই পর্যটকেরা অনেকেই দল বেঁধে বাস বা ম্যাটাডোর ভাড়া করে নামখানার নারায়ণপুরে আসেন। ঘাট থেকে ভেসেলে করে গাড়ি পারাপার করে সরাসরি পৌঁছে যান বকখালিতে।
কিন্তু দিন কয়েক ধরে বড় গাড়ি পারাপারের ভেসেলটি খারাপ। ফলে যে সমস্ত পর্যটকেরা বড় গাড়ি নিয়ে আসছেন, তাঁরা গাড়ি নিয়ে পারাপার করতে পারছেন না। কেউ ফিরে যাচ্ছেন। কেউ বা এ পারে গাড়ি রেখে নৌকোয় পার হয়ে গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে বকখালি পৌঁছচ্ছেন।
এই সমস্যার জন্য সমস্যায় পড়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরাও। বকখালিতে রয়েছে প্রায় ৪৫টি সরকারি ও ৫টি সরকারি আবাসিক হোটেল। ওই হোটেলগুলিতে মূলত কলকাতা থেকে বুকিং হয়। পর্যটকেরা অনেকেই জানেন, গাড়ি নিয়ে গেলে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যাবে বকখালিতে। কিন্তু নারায়ণপুর ঘাটে পৌঁছনোর পরে তাঁদের কপালে ভাঁজ পড়ছে।
সমস্যা সেখানেই শেষ নয়। ওই এলাকার প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার বসাবসকারী মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় মুদিখানা বাজার বা অন্যান্য সামগ্রী কাকদ্বীপ বা ডায়মন্ড হারবার বাজার থেকে বড় গাড়িতে করে ভেসেলে নদী পার করে এলাকায় পৌঁছয়। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে বড় গাড়ি পারাপার বন্ধ থেকে সমস্যায় পড়েছেন এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। জোগান না থাকায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
নামখানা এলাকায় ৮০ শতাংশ মানুষের পান চাষই হল জীবন-জীবিকা। তাঁদের ফসল ওই এলাকার বিভিন্ন মোড় থেকে বড় গাড়িতে করে তুলে ভেসেল পেরিয়ে কাকদ্বীপের পাইকারি বাজারে যায়। কিন্তু বড় গাড়ি পারাপার বন্ধ থাকায় পান চাষিরাও পড়েছেন বিপাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ বেশ কয়েক বছর ধরে কখনও বড় ভেসেল খারাপ হয়ে যাচ্ছে, কখনও বা গাড়ি নামা-ওঠার বার্জ খারাপ হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই এমন সমস্যায় জেরবার সকলে।
নামখানা ব্লকের কংগ্রেস নেতা কুমারেশ পন্ডার অভিযোগ, এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। সে জন্য মানুষকে হয়রান হতে হচ্ছে। আমাদের এই এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত রকমের সামগ্রী বড় বড় ট্রাকে করে ভেসেল পার হয়ে আসে। তা বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ছোট গাড়িতে পৌঁছে যায়। কিন্তু দিনের পর দিন ভেসেল বন্ধ থাকায় এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। একই অভিযোগ সিপিএম নেতা হিমাংশু দাসেরও।
বকখালি ফেজারগঞ্চ হোটেলিয়ার্স ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্মৃতিকন্ঠ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভেসেলে গাড়ি পারাপার অনিয়মিত হয়ে পড়ায় আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। যাঁরা কলকাতা থেকে বুকিং করে আসছেন, তাঁরা নারায়ণপুর ঘাটে এসে যখন শুনছেন ভেসেলে গাড়ি পারাপার বন্ধ, তখনই ফোন করে হোটেল মালিকদের কথা শোনাচ্ছেন। নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রীমন্ত মালি সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘একাধিকবার জেলাশাসক, ভূতল পরিবহণ নিগমের কর্তাদের বিষয়টি জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’’
ভূতল পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, ২০-২৫ বছর ধরে বার্জ বা ভেসেল ভাল ভাবে সংস্কার না হওয়ায় বিপত্তি হচ্ছে। কিছু দিন আগে গাড়ি নামা-ওঠার বার্জটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় কিছু দিন গাড়ি পারাপারে সমস্যা হচ্ছিল। সে সমস্যা যদি বা সমাধান হল, বড় গাড়ি পারাপার করার জন্য (৮-১০ টন ওজনের) ভেসেলটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বর্তমানে ছোট ভেসেলে (২ টন ওজনের) পারাপার চলছে। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিরাঞ্জন সাণ্ডিল্য বলেন, ‘‘নতুন করে সমস্ত কিছু সারানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।’’