পুর নির্বাচন নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি যখন গুটি সাজাতে ব্যস্ত তখন উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা (গ্রামীণ) কংগ্রেসের সভাপতি অসিত মজুমদারের ভাই অমিতবাবুকে জেলার কো-অর্ডিনেটর এবং আটটি পুরসভায় নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান করা নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের একাংশ। এমনিতেই জেলায় গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার কংগ্রেস। তার উপর দীর্ঘ দিন ধরে দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দাদাকে সরিয়ে ভাইয়ের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ায় জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও বাড়বে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এমনকী এমন সিদ্ধান্তের ফলে পুরভোটে আখেরে বিরোধীদেরই সুবিধা করে দেওয়া হল বলে মনে করছে দলের একাংশ।
যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন অমিত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আমাকে জেলার কো-অর্ডিনেটর এবং আটটি পুরসভায় নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, রাহুল গাঁধী নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের তুলে ধরতে চাইছেন বলেই এই রদবদল। এখানে কোনও দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। দাদা নেতা ছিলেন এবং থাকবেন।”
পদ হারানোর বিষয়টি অবশ্য মানতে নারাজ অসিত মজুমদার। তিনি বলেন, “কে কো-অর্ডিনেটর হয়েছে আমার জানা নেই। মনোজ চক্রবর্তী বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করার কে। তাঁর এক্তিয়ারই বা কতটুকু যে একজন এআইসিসি-র সদস্যকে সরানোর কথা বলবেন। তা ছাড়া সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়া চলার সময় কোনও রদবদল সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “আসলে সংগঠন মজবুত করতে না পারায় আমরা জেলা কংগ্রেস নেতারা দলীয় সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর অপসারণ চেয়েছি। সে জন্যই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছে।”
তবে অমিতবাবুকে নতুন দায়িত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “কংগ্রেস একটি বড় দল। সেখানে সব স্তরের কর্মীকেই দলীয় নীতি মেনে চলতে হবে।” দলের একাংশের তাঁর অপসারণ চাওয়া নিয়ে প্রদেশ সভাপতির উত্তর, “কে কী বললেন, তার পাল্টা বিবৃতি দিতে রুচিতে বাধে।”
অমিতবাবু বসিরহাটে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে না চাইলেও তার নমুনা অবশ্য পাওয়া গেল সোমবারই বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে পুরসভার সামনে কংগ্রেসের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে। পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ, পানীয় জলের পাইপ সংস্কার, রাস্তায় আলো, মাতৃসদনে সঠিক চিকিত্সা পরিষেবা-সহ ১৩ দফা দাবিতে পুরপ্রধানের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অসিত মজুমদার, অবিনাশ নাথ, বাবলি বসু, বাবু গাজি সহ দলীয় কাউন্সিলাররা উপস্থিত থাকলেও দেখা যায়নি অমিতবাবুকে।
তবে দায়িত্ব পাওয়ার পরই কাজে নেমে পড়েছেন অমিতবাবু। জেলার আটটি পুরসভায় ভোটের জন্য ইতিমধ্যে তিনজন করে নির্বাচনী কমিটি গড়ে ভোটের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।