ডায়মন্ড হারবার

প্লাস্টিক জমে জল সরে না নালায়

খাস কলকাতা মহনগরীতে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে পুরসভাকে বিঁধেছে হাইকোর্ট। রাজ্যের জেলা শহরগুলিতেও প্লাস্টিক দূষণের বাড়বাড়ন্ত কিন্তু রীতিমতো উদ্বেগের। অথচ তা নিয়ে হুঁশ নেই কারও।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:১৭
Share:

খাস কলকাতা মহনগরীতে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে পুরসভাকে বিঁধেছে হাইকোর্ট। রাজ্যের জেলা শহরগুলিতেও প্লাস্টিক দূষণের বাড়বাড়ন্ত কিন্তু রীতিমতো উদ্বেগের। অথচ তা নিয়ে হুঁশ নেই কারও।

Advertisement

এই যেমন ডায়মন্ড হারবার শহর। ভোর ভোর হুগলি নদীর ধারে হাঁটাহাঁটি করে প্লাস্টিক বোঝাই ব্যাগে ফল, শাক-সব্জি নিয়ে বাড়ি ফেরেন অনেকেই। ডায়মন্ড হারবার শহরের বহু দিনের চেনা ছবি এটাই। আগে বেশিরভাগ ক্রেতাই বাজারের জন্য কাপড়, চট বা নাইলনের থলে ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন সব দোকানেই প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। আর সেখানে নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা দেখার জন্য নজরদারির বালাই নেই।

ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। স্টেশনবাজার ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যায় বাজার বসে। বাজার চত্বরে ডাঁই হয়ে জমে প্লাস্টিকের ব্যাগ। হাওয়ায় উড়ে নিকাশি নালায় পড়ে তার মুখ বন্ধ করে দেয়। বর্ষায় নোংরা জল উপচে দায় হয়ে ওঠে যাতায়াত। পচা প্লাস্টিকের আবর্জনা আর জমা জলে মশার উপদ্রবও বাড়ে। সঙ্গে ভোগান্তি বাড়ায় দুর্গন্ধ।

Advertisement

৪০ মাইক্রনের নীচে পাতলা প্লাস্টিক এবং ১২/১৬ ইঞ্চি মাপের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করার নিয়ম নেই। অথচ সেই ব্যাগই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এই প্লাস্টিকের ব্যাগগুলি সহজে নষ্ট হয় না। উল্টে এগুলির বাধায় বৃষ্টির জল মাটির নীচে নামতে পারে না। ফলে কৃষিজমির উর্বরতা কমে যায়। পুকুরের জলও দূষিত করে এই প্লাস্টিকের ব্যাগ। এতে মাছের রোগ বাড়ে। অনেক সময় প্লাস্টিকের ব্যাগ খেয়ে ফেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে গবাদি পশুরাও। এমনকী, গঙ্গার জলেও দূষণ বাড়াচ্ছে এই প্লাস্টিকের ব্যাগ।

প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে পুরসভার তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ডায়মন্ড হারবারবাসীর অভিযোগ, দোকানে দোকানে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের কথা পুরসভা থেকে প্রশাসন সকলেই জানে। তারপরেও শহরের ছোট-বড় মুদির দোকান থেকে সব্জি ব্যবসায়ী, সর্বত্রই নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার চলছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পাতলা প্লাসটিকের ব্যাগ ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের ৫০০ এবং ক্রেতাদের ৫০ টাকা জরিমানা হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

এ ক্ষেত্রে নিয়মিত নজরদারি এবং উপযুক্ত পদক্ষেপই একমাত্র পথ বলে মনে করেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত বাজারে বাজারে অভিযান চালাতে হবে। এবং শাস্তির আইনটা প্রয়োগ করতে হবে। না হলে এটা আটকানো যাবে না।’’ পাশাপাশি মানুষের সচেতনতারও দরকার রয়েছে বলে তাঁর মত। প্লাস্টিকের পরিবর্তে শালপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করেন সুভাষবাবু।

সমস্যা মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষও। তবে তাঁদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। ডায়মন্ড হারবার পুরপ্রধান মীরা হালদার জানান, দোকানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকবার কয়েকজনকে ধরে আনা হয়েছিল। তারপরে কিছুদি ন প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন আবার তা বেড়েছে। প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার পুরোপুরি নির্মূল করতে আগে ব্যাগ তৈরির কারখানা বন্ধ প্রয়োজন বলে মত মীরাদেবীর। কিন্তু পুরসভা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে না কেন? এর সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। আর ডায়মন্ড হারবার মহকুমাশাসক শান্তনু বসুর আশ্বাস, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’’

মানুষও চান কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দাঁড়ি পড়ুক দূষণে। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন