বিদায় বন্ধু

পেশোয়ারের বন্ধুদের জন্য পথে নামল বনগাঁর পড়ুয়ারা

টিভির পর্দায় বা খবরের কাগজের পাতায় ওরা দেখেছে, ওদেরই বয়সী পড়ুয়াদের ছিন্ন-ভিন্ন দেহ, ছেঁড়া জুতো, পোড়া বই, গুলিতে ঝাঁঝরা ক্লাসঘরের ভয়াবহ ছবি। তালিবান জঙ্গিদের কাছে পেশোয়ারের সেনা স্কুলের শিশু আর তাদের মধ্যে যে আদতে কোনও ফারাক নেই, এই ঘটনা তা তাদের বেশ বুঝিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৩
Share:

মোমবাতি জ্বালিয়ে পাশে থাকার বার্তা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

টিভির পর্দায় বা খবরের কাগজের পাতায় ওরা দেখেছে, ওদেরই বয়সী পড়ুয়াদের ছিন্ন-ভিন্ন দেহ, ছেঁড়া জুতো, পোড়া বই, গুলিতে ঝাঁঝরা ক্লাসঘরের ভয়াবহ ছবি। তালিবান জঙ্গিদের কাছে পেশোয়ারের সেনা স্কুলের শিশু আর তাদের মধ্যে যে আদতে কোনও ফারাক নেই, এই ঘটনা তা তাদের বেশ বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলের শিক্ষকেরা নিহত পাকিস্তানি বন্ধুদের আত্মার শান্তি কামনা করে ও ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করার কথা জানাতেই বিপুল উৎসাহে পথে নেমে পড়ল বনগাঁ হাইস্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রায় শ’চারেক খুদে পড়ুয়া।

Advertisement

প্রথম-চতুর্থ শ্রেণির অর্কজ্যোতি দে, শীর্ষ রায়, ফাইন ফইজলের মতো পড়ুয়ারা বৃহস্পতিবার স্কুলের পরীক্ষা শেষে সকাল ৯টা নাগাদ বনগাঁ শহরে মিছিলে হাঁটল। তাদের সঙ্গে পা মেলালেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকেরা। ওদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডের কোনওটিতে লেখা ছিল ‘সন্ত্রাসের আঁতুড় ঘর থেকে জঙ্গিরা নির্মূল হোক।’ কোথাও লেখা ‘বাবা-মায়ের কোল যেন জঙ্গিহানায় খালি না হয়ে যায়’ বা ‘তোমরা শান্তিতে ঘুমাও, আমরা তোমাদের ভুলব না।’

বনগাঁ শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে মিছিল শেষ হয় স্কুল চত্বরে এসে। সেখানে স্কুলের স্থায়ী মঞ্চে সকলে জঙ্গিহানায় নিহতদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করে। মোমবাতি জ্বালানো হয়। প্রধান শিক্ষক নারায়ণচন্দ্র দত্ত এ দিনের কর্মসূচির ব্যাখা করে বলেন, “কাগজে খবরটা পড়ার পর থেকে মানসিক ভাবে যেন অসাড় হয়ে আছি। স্কুলে আসার পরে শিক্ষক বিদ্যুৎ মণ্ডল প্রস্তাবটা প্রথমে দেন। তখনই সিদ্ধান্ত নিই। ছাত্রছাত্রীরাও উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। মানুষকে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কিছুটা হলেও সচেতন করাই মিছিলের উদ্দেশ্য ছিল।”

Advertisement

কী বলছে পড়ুয়ারা? তাদের কথায়, “টিভিতে দেখেছি স্কুলে ঢুকে আমাদের মতো ছাত্রদের গুলি করে জঙ্গিরা খুন করছে। আজকে পাকিস্তানে হয়েছে। কিন্তু ও রকম যে কোনও জায়গাতেই হতে পারে। এমন ঘটনার প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমেছি।” অভিভাবক সুলেখা ভৌমিক বললেন, “ওই নারকীয় ঘটনাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আমিও মা। বুকটা খাঁ খাঁ করছে। সন্তান হারানোর যন্ত্রনা যে কী, ভাষায় বোঝানো যাবে না।” এ দিন সন্ধেয় হাবরাতেও ঘটনার প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন