বেপরোয়া বাস থেকে পড়ে পিষ্ট নাতি-ঠাকুরমা

ছোট্ট নাতিকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসে উঠছিলেন জাহানারা বিবি। বাসের পা-দানিতে পা রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু’জনের কারওই আর গন্তব্যে পৌঁছনো হল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪৬
Share:

জ্বলছে বাস। বুধবার সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

ছোট্ট নাতিকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসে উঠছিলেন জাহানারা বিবি। বাসের পা-দানিতে পা রেখেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু’জনের কারওই আর গন্তব্যে পৌঁছনো হল না।

Advertisement

চালক বাস স্টার্ট করেই হঠাৎ ব্রেক কষায় পা-দানি থেকে পড়ে গিয়ে সেই বাসেরই পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলেন ঠাকুরমা আর নাতি। বুধবার সকালে এই দুর্ঘটনার পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মধ্যমগ্রামের দিগবেড়িয়া এলাকায়। ক্ষিপ্ত জনতা বাসে আগুন দেয়। প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ চলে বাদু রোডে। পুলিশ ও র‌্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে।

জাহানারা বিবি দিগবেড়িয়ারই তেঁতুলতলার বাসিন্দা। তাঁর ছেলে জাকির হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি। জাকিরের চার বছরের ছেলে শেখ রাজাকে নিয়ে খড়িবাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন জাহানারা। সঙ্গে ছিলেন জাহানারার মেয়ে কামদুন নেহারও। দিগবেড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাগবাজার-খড়িবাড়ি রুটের একটি বাসে ওঠেন তাঁরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তখন সকাল সাড়ে ১০টা। জাহানারার মেয়ে সবে বাসে উঠেছেন। ঠাকুরমা আর নাতি তখনও সামনের গেটের পা-দানিতে।

Advertisement

দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে পড়েছেন কামদুন। ঘটনার বিকেলেও তাঁর গলায় আতঙ্ক। বললেন, ‘‘আমরা উঠতে না-উঠতেই হ্যাঁচকা মেরে স্টার্ট দেয় বাসটা। একটু এগিয়েই সামনের একটা গাড়ি এসে পড়ায় জোরে ব্রেক কষে। তার পরে ফের গতি বাড়িয়ে ছুটতে শুরু করে। আমরা চিৎকার করি। তবু বাস থামেনি।’’ বাসচালক হঠাৎ ব্রেক কষায়
নাতিকে নিয়ে পা-দানিতে পা রাখা জাহানারা টাল সামলাতে পারেননি। পড়ে যান মাটিতে। বাসের পিছনের চাকা পিষে দেয় দু’জনকেই। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের।

উত্তেজিত জনতা বাসটিকে তাড়া করে। বেগতিক দেখে কিছুটা গিয়েই রাস্তায় বাস ফেলে পালিয়ে যায় চালক। বিক্ষোভকারীরা বাসটিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। জনতার ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দেয় এলাকার এক যুবকের খুনের খবর। মোফিজুর আলি নামে দিগবেড়িয়ারই ওই যুবক সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ দিন খবর আসে, এয়ারপোর্ট থানা এলাকার দ্রোণনগরে তাঁর দেহ পাওয়া গিয়েছে।

দুই ঘটনা ঘিরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দমকল বাসের আগুন নেভাতে এলে তাদেরও তাড়া করে জনতা। ভাঙচুর হয় দমকলের গাড়ি। বাদু রোড অবরোধ করায় থমকে যায় যান চলাচল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যান বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারও। সাংসদ, মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ এবং জেলার পুলিশকর্তাদের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেন বাসিন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, বাসটিকে আটক করা হয়েছে। রাতে গ্রেফতার হয়েছে বাসচালক গোপাল সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন