ভোটে ভরাডুবি হল এ বারেও, জামানত বাজেয়াপ্ত কংগ্রেসের

লড়াইটা ছিল বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত ঠেকানোর। কিন্তু সোমবার ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল, কংগ্রেস প্রার্থী কুন্তল মণ্ডলের জামানত বাজেয়াপ্ত তো হলই, উল্টে মোট ভোটপ্রাপ্তির দিক থেকেও গত লোকসভা নির্বাচনে ধারে কাছে পৌঁছতে পারল না তারা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০১
Share:

ভোট গণনাকেন্দ্রের সামনে ফোনে ব্যস্ত উদ্বিগ্ন কুন্তল। —নিজস্ব চিত্র।

লড়াইটা ছিল বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত ঠেকানোর। কিন্তু সোমবার ফল প্রকাশের পরে দেখা গেল, কংগ্রেস প্রার্থী কুন্তল মণ্ডলের জামানত বাজেয়াপ্ত তো হলই, উল্টে মোট ভোটপ্রাপ্তির দিক থেকেও গত লোকসভা নির্বাচনে ধারে কাছে পৌঁছতে পারল না তারা।

Advertisement

গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী ইলা মণ্ডল বনগাঁ কেন্দ্র থেকে পেয়েছিলেন ৪৩,৮৬৬টি ভোট। এ বার তা কমে দাঁড়িয়ছে ২৯,১৪৯টি ভোটে। শতাংশের হিসাবেও ভোট কমেছে। গতবার ছিল ৩.৪৪ শতাংশ ভোট। এ বার তা নেমে হয়েছে ২.৩৫ শতাংশে। বেশ কিছু বুথে কংগ্রেস প্রার্থী একটি ভোটও পাননি।

প্রার্থীর বাড়ি বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে। ওই বিধানসভার ন’টি বুথে কংগ্রেস প্রার্থী কোনও খাতাই খুলতে পারেননি। গতবারের মতো এ বারও কংগ্রেস সাতটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে স্বরূপনগর কেন্দ্র থেকে সব থেকে বেশি ভোট পেয়েছে। প্রাপ্ত ভোট ৭,৫০৮টি। যদিও গত লোকসভায় সংখ্যাটা ছিল ১৩,৩৭১টি ভোট।

Advertisement

রাজ্য ও জেলা কংগ্রেস নেতারা আশা করেছিলেন, জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া আটকে যদি ভোট কিছু বাড়িয়ে নেওয়া যায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ বার বয়সে তরুণ এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী হিসাবে কুন্তলকে টিকিট দিয়েছিলেন। অধীরবাবু নিজেও ভোটের প্রচারে বিস্তর সময় ব্যয় করেছেন এই কেন্দ্রে। বেশ কিছু সভা করেছেন। সভাগুলিতে দীর্ঘ বক্তৃতাও করেছেন। জঙ্গিপুরের সাংসদ, তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিৎবাবুকে এনে রোড শো করানো হয়েছিল। কংগ্রেস নেতাদের দাবি ছিল, প্রচারে এ বার তাঁরা ভাল সাড়া পাচ্ছেন। বিশেষ করে হরিণঘাটা ও স্বরূপনগর এলাকায়।

তা হলে ভোটে এমন শোচনীয় ফলাফলের কারণ কী?

দলের ভিতরে একান্ত আলোচনায় কিছু কারণের কথা মেনে নিচ্ছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একাংশ। তাঁদের মতে, এ হেন ফলাফলের পিছনে মূল কারণ হল, গোষ্ঠীকোন্দল। এমনিতেই জেলায় কংগ্রেসের সংগঠনের হাল খুবই খারাপ। তার উপরে ঘরোয়া কোন্দলেই জেরবার দল। কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা মনে করছেন, স্বরূপনগরে অধীর চৌধুরীর সভায় দেখা যায়নি স্থানীয় প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি (গ্রামীণ) অসিত মজুমদারকে। প্রচারে দেখা যায় জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সমাদ্দারকে, যিনি গত ভোটে দলের তরফে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, “প্রথমতম প্রার্থী হিসাবে কুন্তলকে আমরা কেউ মেনে নিতে পারিনি। কারণ ওকে কেউ কংগ্রেস করতে দেখিনি। তা ছাড়া, রাজ্য নেতৃত্ব প্রচারে আমাদের ডাকেননি। প্রদেশ সভাপতিই জেলাতে দলীয় কোন্দলে মদত দিয়ে গিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে ভোটে।” বস্তুত, প্রার্থী হিসাবে কুন্তলের নাম ঘোষণার পরে বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর সাধন দাসের উপস্থিতিতে এক দল কর্মী-সমর্থক দলীয় কার্যালয়ে চড়াও হয়ে কুন্তলকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। দলের এই বিক্ষুব্ধ অংশটিকে প্রচারেও দেখা যায়নি। প্রচারে এ বার কংগ্রেসের মুখ বনগাঁ শহর কংগ্রেস সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘু মানুষ শেষ মুহূর্তে নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনের ঠিক মুখে দিল্লি বিধানসভার ফলে কংগ্রেসের শোচনীয় ফলের প্রভাবও পড়েছে বনগাঁর ভোটে।”

গতবারের তুলনায় এ বার আরও ভোট কম হল কেন?

কৃষ্ণপদবাবুর ব্যাখ্যা, গতবার ভোটের সময়ে কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল। ফলে মানুষ বেশি ভোট দিয়েছেন। দলের কেউ কেউ বলছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে কড়া টক্কর নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে বিজেপি। সিপিএমেরও যে কারণে ভোট ব্যাঙ্কে ধস নেমেছে।

কংগ্রেস প্রার্থী কুন্তল মণ্ডল অবশ্য বলেন, “সংগঠন শক্তিশালী না হওয়ার কারণে ওই ফল হয়েছে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি (শহর) তাপস মজুমদারের কথায়, “কংগ্রেস ও সিপিএমের ভোট বিজেপির দিকে চলে গিয়েছে। আমাদের লড়াইটা ছিল জামানত বাজেয়াপ্ত ঠেকানো। ফল ভাল করতে হলে আমাদের আন্দোলনমুখী হতেই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন