মোটরবাইক চুরিতে মার, দড়ির ফাঁসে যুবকের দেহ

মোটরবাইক চুরির ঘটনায় আগের রাতেই তাঁকে মারধর করা হয়েছিল। শনিবার ভোরে নির্মীয়মাণ বাড়ির বারান্দার গ্রিলে গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায় মিলল দেগঙ্গার সব্জি বাজারের এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মোতালেব মণ্ডল ওরফে ঝন্টু (৩৪)। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার আকুঞ্জিপাড়ায়। তাঁকে মারধরের অভিযোগে সাদ্দাম হোসেন নামে এক জনকে শুক্রবার রাতেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ দিন বারাসত আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০০
Share:

মোতালেব মণ্ডল

মোটরবাইক চুরির ঘটনায় আগের রাতেই তাঁকে মারধর করা হয়েছিল। শনিবার ভোরে নির্মীয়মাণ বাড়ির বারান্দার গ্রিলে গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায় মিলল দেগঙ্গার সব্জি বাজারের এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ।

Advertisement

পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মোতালেব মণ্ডল ওরফে ঝন্টু (৩৪)। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার আকুঞ্জিপাড়ায়। তাঁকে মারধরের অভিযোগে সাদ্দাম হোসেন নামে এক জনকে শুক্রবার রাতেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ দিন বারাসত আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ দিন ঝন্টুর দেহ মেলার পরে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দেগঙ্গার সব্জি বাজারে ঝণ্টুুর কাঁটা অর্থাৎ বড় দাঁড়িপাল্লা আছে। যাবতীয় বস্তা বোঝাই পাইকারি মাল তাঁর দোকানেই ওজন হত। শুক্রবার সকালে ওই দোকানের সামনে মোটরবাইক রেখে সব্জি বিক্রি করতে বাজারে গিয়েছিলেন মজিত আলি মণ্ডল নামে এক জন। খানিক পরে ফিরে তিনি দেখেন, মোটরবাইক উধাও। ঝন্টুকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তাঁর কিছু জানা নেই।

Advertisement

তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, কাছেই বেড়াচাঁপা বাজারে জুতোর দোকানে কাজ করেন মজিতের জামাই সাদ্দাম হোসেন। তিনিই সঙ্গীদের নিয়ে মোটরবাইকের খোঁজে বেরোন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এলাকাতেই একটি দোকানের সামনে তিনি মোটরবাইকটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সেটির নম্বর প্লেট বদলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাদ্দাম খুব ভাল ভাবে বাইকটি চিনতেন। কুতুবুদ্দিন মণ্ডল নামে এক জন সেটিতে বসেছিলেন। তিনি প্রথমে দাবি করেন, বাইকটি তাঁরই। সাদ্দামরা তাঁকে চেপে ধরলে তিনি বলেন, ঝন্টু তাঁকে সেটি বিক্রি করতে দিয়েছে।

অভিযোগ, এর পরেই মোটরবাইক চুরির অভিযোগে ঝন্টুকে তাঁর বাড়ির সামনের একটি চায়ের দোকান থেকে মারতে-মারতে বেড়াচাঁপা মোড়ে নিয়ে আসে সাদ্দাম ও তার দলবল। মারের চোটে নিস্তেজ হয়ে পড়েন ঝন্টু। ইতিমধ্যে কুতুবুদ্দিন বাইক ফেলে পালায়। ঝন্টুর আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরা অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁরা উল্টে সাদ্দামকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দু’জনকেই উদ্ধার করে। ঝন্টুকে স্থানীয় বিশ্বনাথপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। মোটরবাইকটি আটক করে পুলিশ। যদিও কেউ সেটি চুরির অভিযোগ দায়ের করেনি।

পারিবারিক সূত্রের খবর, ঝন্টুর দুই ছেলেমেয়ে। আগামী মাসে তাঁর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ ওঠায় যাতে মেয়ের বিয়ে ভেস্তে না যায়, তার জন্য রাত ১১টা নাগাদ ঝন্টু মেয়ের হবু শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখান থেকে রাত ২টো নাগাদ বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়েন। ভোরে বাড়ির লোক ঘুম থেকে উঠে দেখেন, ঝন্টু ঘরে নেই। পরে দেখা যায়, পাশের নির্মীয়মাণ বাড়ির বারান্দার গ্রিল থেকে গলায় নাইলনের দড়ি লাগানো অবস্থায় তাঁর দেহ ঝুলছে। ঝন্টুর স্ত্রী ছালেয়া বিবির সন্দেহ, “চুরির মিথ্যা বদনাম সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন। আবার কেউ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে খুন করে ঝুলিয়েও দিতে পারে। পুলিশ দেখুক, কী হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন