শিউলির অভাবে বিপাকে মোয়া ব্যবসায়ীরা

বাজার আছে। রয়েছে বিদেশে রফতানির হাতছানিও। কিন্তু ভাল নলেন গুড়ের অভাবে বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ু-জয়নগরের মোয়া ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। কণকচূড় ধানের খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড়ই মোয়া তৈরির প্রধান উপাদান। কিন্তু পছন্দের নলেন গুড় মোয়া ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ পাচ্ছেন না। কারণ, ‘শিউলি’র অভাব। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় বানান এই ‘শিউলি’রা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৯
Share:

জয়নগরে খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধা হচ্ছে। ছবি:শশাঙ্ক মণ্ডল।

বাজার আছে। রয়েছে বিদেশে রফতানির হাতছানিও। কিন্তু ভাল নলেন গুড়ের অভাবে বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ু-জয়নগরের মোয়া ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। কণকচূড় ধানের খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড়ই মোয়া তৈরির প্রধান উপাদান। কিন্তু পছন্দের নলেন গুড় মোয়া ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ পাচ্ছেন না। কারণ, ‘শিউলি’র অভাব। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় বানান এই ‘শিউলি’রা।

Advertisement

গুড়-শিল্পে ‘শিউলি’দের গুরুত্ব অনেক। ঘড়ি ধরে ঠিক সূর্যাস্তের সময় খেজুর গাছ কেটে মাটির হাড়ি ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। সূর্যোদয়ের ঘণ্টাখানেক আগে ওই রস গাছ থেকে নামিয়ে আনেন। তেঁতুল কাঠের জ্বালে পাক দিয়ে সেই রস থেকে তৈরি করেন গুড়। খাটাখাটনির পরে এক কেজি গুড় মহাজনের কাছে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করে ‘শিউলি’দের লাভ থাকে কেজি প্রতি বড়জোর ২০ টাকা।

বহড়ু ও জয়নগরের অধিকাংশ ‘শিউলি’ এখন বৃদ্ধ। কেউ গাছ থেকে পড়ে চোট পেয়ে শয্যাশায়ী। কেউ বয়সের ভারে ধকল নিতে পারছেন না। বহড়ুর বাসিন্দা ‘শিউলি’ কাহার গাজিরের কথায়, “খেজুর গাছে ওঠা-নামা কষ্টসাধ্য কাজ। বয়সের জন্য এখন আর গাছে উঠতে পারি না।” ‘শিউলি’দের মধ্যে এক সময় নামডাক ছিল বহড়ুর মিহির মণ্ডলের। বয়সের ভারে তিনিও গাছে ওঠা ছেড়ে দিয়েছেন। জানালেন, তিন ছেলের কেউই বাবার পেশায় আসতে চায় না। তারা পড়াশোনা করছে।

Advertisement

নতুন প্রজন্ম ‘শিউলি’র কাজে আসতে না চাওয়াতে সমস্যা বাড়ছে বলে জানালেন স্থানীয় ‘মোয়া ও নলেন গুড় বাঁচাও কমিটি’র সদস্য বাবলু ঘোষ। তাঁর আক্ষেপ, “এক সময় জয়নগর-বহড়ু এলাকায় প্রায় আড়াইশো-তিনশো শিউলি ছিলেন। এখন হাতে গোনা ৫০ জনও আছেন কি না সন্দেহ। নলেন গুড়ের সঙ্কট মিটবে কোথা থেকে!”

ঘটনা হল, ভাল গুড়ের অভাবের এই বাজারে কিন্তু ব্যবসায়ীরা বিদেশে মোয়া পাঠানোর জন্য ভাল বরাত পেয়েছেন। ‘মোয়া ও নলেন গুড় বাঁচাও কমিটি’ ও ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর প্রায় দু’কুইন্টাল মোয়া বিদেশে পাঠানোর বরাত রয়েছে। মোয়া ব্যবসায়ী রঞ্জিত ঘোষের কথায়, “এ বছর বিদেশের জন্য অর্ডার প্রচুর। কিন্তু ভাল মোয়া বানাতে গেলে যে মানের নলেন গুড় লাগবে, এ বার তার অভাব বড় বেশি। রাজ্যে আমাদের মোয়ার যে চাহিদা, সেটা বজায় রাখাই দায় হয়ে উঠেছে। বিদেশে পাঠাব কী ভাবে?”

‘মোয়া ও নলেন গুড় বাঁচাও’ আন্দোলনের অন্যতম শরিক জয়নগরের বিধায়ক তরুণ নস্কর। তিনি বলেন, “শিউলির অভাব একটা বড় সমস্যা। তা ছাড়া, কমছে খেজুর গাছও। খেজুর গাছ সংরক্ষণ ও শিউলি-সমস্যা নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব তোলা হয়েছিল। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরে সঙ্গে আলোচনাও হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি।” রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর আশ্বাস, “উদ্যানপালন দফতরের সঙ্গে কথা বলে দেখব সামগ্রিক ভাবে কী ভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যায়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement