মিলেনিয়াম সায়েন্স পার্ক। নিজস্ব চিত্র।
সহস্রাব্দ বিজ্ঞান উদ্যান বা মিলেনিয়াম সায়েন্স পার্ক, (মিলেনিয়াম পার্ক নামেই বেশি পরিচিত) এখন ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির কাছে যা অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের পড়তেই রাজ্যের দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ এসে এখানে ভিড় করছেন। কলকাতা থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অশোকনগর-কল্যাণগড় শহরের রাধা কেমিক্যাল মোড় এলাকায় ওই পার্কটিকে ঘিরে পর্যটন ব্যবসা গড়ে উঠেছে।
কলকাতা থেকে যশোহর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বনগাঁর দিকে যাওয়ার পথে বিল্ডিং মোড় থেকে বাঁ দিকে অশোকনগর শহরের মধ্যে ঢুকলেই পৌঁছে যাওয়া যায় মিলেনিয়াম পার্কে। ট্রেন পথে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার লোকাল ট্রেনে শিয়ালদহ থেকে উঠে অশোকনগর স্টেশনে নেমেও যাওয়া যায় ওই পার্কে। একটি দিন ছুটি কাটানোর জায়গা হিসাবে ওই পার্কটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
একটা সময় বহু শিল্প এখানে ছিল। আজ কোনওটা বন্ধ বা কোনওটা বন্ধের মুখে। এখানে এখন এই পার্ককে ঘিরে পর্যটন শিল্পই টিকে আছে। পার্কটি এখানকার মানুষের কাছে গর্বের। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর দত্ত বলেন, “ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ১২ তারিখ পর্যন্ত এখানে আসা মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।” পার্কটির ভিতরে রয়েছে বনভোজনের নির্দিষ্ট এলাকা। সমীরবাবু বলেন, “পার্কের ভিতর ৪০টি বনভোজনের স্পট আছে। বনভোজনের জন্য স্পট ও মাথা পিছু লোক হিসাবে ভাড়া নেওয়া হয়। ভিতরে মাইক বক্স বাজাতে দেওয়া হয় না। তবে নিচু স্বরে গান বাজানোর অনুমতি দেওয়া হয়। খেলাধূলারও ব্যবস্থা আছে।” রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্য খরচ বাদ দিয়েও পুরসভা এই পার্ক থেকে বছরে আয় করে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। যা এলাকার উন্নয়নে খরচ করা হয় বলে জানান সমীরবাবু।
২০০২ সালে ৪ ডিসেম্বর রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুরসভার উদ্যোগে তৈরি ওই পার্কের উদ্বোধন করেন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৬ বিঘা জমি নিয়ে তৈরি ওই পার্ক। ভিতরে ঢুকে দেখা যাবে পাখিরালয় ও সাপ সংরক্ষণ কেন্দ্র। অজগর থেকে শুরু করে গোখরো, কেউটে, কালাচ, চন্দ্রবোড়া সবই রয়েছে নিজেদের মেজাজে। পুর কর্তৃপক্ষের তরফে জানান হয়েছে, এলাকার মানুষ এখন আর কেউ সাপ মারেন না। কোথাও সাপ দেখা গেলে তা ধরে এখানে নিয়ে আসেন। তাদের চিকিৎসা করিয়ে ফের বন জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। পার্কে ঢোকার মুখেই পুরসভার উদ্যোগে তৈরি হয়েছে সায়েন্স মিউজিয়াম। সেখানে শুক্ল ও কৃষ্ণ পক্ষে বাইনোকুলার দিয়ে চাঁদ দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। তৈরি হয়েছে বিড়লা তারা মণ্ডলের ক্ষুদ্র সংস্করণ। সম্প্রতি যার উদ্বোধন করেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দেখা যাবে ঘোড়ার দোলনা, রোপওয়ে, বোটিং। আছে ঝুলন্ত সেতু ঝর্না। বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে রয়েছে স্যুইং বোটিং।
চারদিকে উচু পাঁচিলে ঘেরা পার্কে ঢুকতে হলে টিকিট কাটতে হয়। রয়েছে গেস্ট হাউজ। দু’হাজার টাকায় তা ভাড়া পাওয়া যায়। সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া রোজ বেলা আড়াইটে থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এখানকার রোপওয়ে রাজ্যের মধ্যে সব থেকে উঁচুতে, মাটি থেকে ৮৪ ফুট। রোপওয়েতে উঠে দেখা যায় নীচে অপূর্ব সবুজের সমারোহ। যে দিকে চোখ যায়, শুধুই নারকেল-সুপারি গাছের সবুজ মাথা। একান্তে সময় কাটাতে দেখা গেল বহু যুগলকে। শুধু তাই নয় পার্কটিকে ঘিরে মানুষ বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। দোকানপাট বসেছে। এর চারিপাশে রয়েছে খাওয়ার দোকানও। যাদবপুর থেকে এখানে পরিবারের সঙ্গে এসেছিলেন শিক্ষিকা অমৃতা ভট্রাচার্য। তাঁর কথায়, “কলকাতার এত কাছে এত সুন্দর একটি পার্ক আছে না এলে জানতেই পারতাম না। খুব ভাল সময় কেটেছে। ভবিষ্যতে সময় পেলে ফের আসব।”
মিলেনিয়াম সায়েন্স পার্ক তৈরি হওয়ার আগে সাধারণ মানুষের কাছে ওই শহরের আকর্ষণ যার জন্য ছিল, তা হল সংহতি পার্ক। এই পার্কটি তৈরি হয় ১৯৯৭ সালে। উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন রাজ্যপাল কেভি রঘুনাথ রেড্ডি। সংহতি পার্কের অতীতের সেই রমরমা আজ না থাকলেও মানুষের কাছে এখনও আগ্রহের বিষয়। মিকি মাউস, ট্রয় ট্রেন, বোটিং-সহ অনেক কিছু দেখার আছে এখানেও। তবে আকর্ষণ বলতে রয়েছে যাদুবক্স। আলিবাবা চল্লিশ চোরের মতো চিচিং ফাঁক বললেই পাহাড়ের মধ্যে থাকা গুহার দরজা খুলে যায়। সব মিলিয়ে অশোকনগরের পার্কগুলি ভিড়ে জমে সারা বছরই।