স্কুলের জমিতে দোকান ভাঙচুর করল পড়ুয়ারা

স্কুলের জমি দখল করে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছিল। দোকান সরাতে পুলিশ-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এই অভিযোগে মঙ্গলবার রাস্তা অবরোধে নামে পড়ুয়ারা। পরে পুলিশের সামনেই দোকান ঘর ভাঙচুর করে তারা। হাসনাবাদের ভেবিয়া উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দানা বাঁধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০১:১৬
Share:

ভাঙচুরের পরে। মঙ্গলবার হাসনাবাদে নির্মল বসুর তোলা ছবি।

স্কুলের জমি দখল করে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছিল। দোকান সরাতে পুলিশ-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এই অভিযোগে মঙ্গলবার রাস্তা অবরোধে নামে পড়ুয়ারা। পরে পুলিশের সামনেই দোকান ঘর ভাঙচুর করে তারা।

Advertisement

হাসনাবাদের ভেবিয়া উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দানা বাঁধে। ছাত্র ও অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলের জমি দখল করে গজিয়ে ওঠা ওই সব দোকানে বসে দুষ্কৃতীরা ছাত্রছাত্রীদের অশালীন মন্তব্য করে। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়া হয়। স্কুলের মাঠে মদের বোতল ফেলে রেখে যায় দুষ্কৃতীরা। ব্যবসায়ীদের অবশ্য বক্তব্য, স্কুলের তরফে জমি ভাড়া দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশকে দাঁড় করিয়ে রেখে বিনা নোটিসে দোকানে ভাঙচুর-লুঠপাট চালানো হয়েছে। দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়ার অভিযোগও মানতে চাননি তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ীরা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যনারায়ণ সাঁতরা অবশ্য ব্যবসায়ীদের দাবি অস্বীকার করে বলেন, “ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুলের জমির মাপজোক হয়ে যাওয়ার পরে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল। স্কুলের জমির মধ্যে ৯টি দোকান পড়ে। মহকুমাশাসকের নির্দেশে পুলিশ জবরদখলকারীদের দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিসও দিয়েছিল।” তাঁর দাবি, এরপরেও দোকান না সরানোয় ক্ষুব্ধ ছাত্ররা প্রথমে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। তারপপরেও প্রশাসনের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া না পেয়ে নিজেরাই স্কুলের জমি দখলমুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে।

Advertisement

স্কুলের পরিচালন কমিটির সম্পাদক জুলফিকার আলি মোল্লার বক্তব্য, “কথা ছিল মঙ্গলবার পুলিশ এসে যারা দোকান সরিয়ে দেবে। কিন্তু পুলিশ এসে জানায়, তাদের পক্ষে দখল সরানো সম্ভব হচ্ছে না। তখন কিছু ছাত্র উত্তেজিত হয়ে নিজেরাই দখলমুক্ত করার কাজে নেমে পড়ে।”

এ বিষয়ে বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, “জমি দখল নেওয়া হয়ে থাকলে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে দিয়ে আগে মাপজোকের প্রয়োজন। সে জন্য পুলিশকে বলা হলেও দোকান ভাঙার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কোনও পক্ষকে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার জন্যও বলা হয়নি।” প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেন ভাঙচুর, উচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেছেন মহকুমাশাসক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে ভেবিয়ার স্কুলটির সামনে কয়েক জন ব্যবসায়ী দোকানঘর করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে স্কুলের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। সম্প্রতি অভিযোগ উঠতে শুরু করে, ওই সব দোকানে বসা কয়েক জন সমাজবিরোধীর নানা ভাবে ছাত্রছাত্রীদের বিরক্ত করছে। কিছু অভিভাবক ভয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পর্যন্ত চাইছেন না। এ সব নানা কারণে স্কুলের সামনে থেকে দোকান সরিয়ে পাঁচিল দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষের সঙ্গে মহকুমাশাসকের একাধিকবার আলোচনাও হয়। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ দেওয়া হয় প্রশাসনের কাছে। তারই জেরে গত ১৬ জুন হাসনাবাদ থানার পুলিশের পক্ষে লিখিত নোটিস দিয়ে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়, স্কুলের জমি বেআইনি ভাবে জবরদখল করা চলবে না। মহকুমাশাসকের নির্দেশে সাত দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীরা দোকান-ঘর সরিয়ে না নিলে আইননত ব্যবস্থা নেওয়ার হবে। কিন্তু তারপরেও ব্যবসায়ীরা দোকান সরাননি।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বসিরহাটের অন্য একটি জমি এ দিনই হাইকোর্টের নির্দেশে খালি করার কথা ছিল। সেই মতো বসিরহাটের পুলিশও পৌঁছয় এলাকায়। কিন্তু রটে যায়, স্কুলের দখল নেওয়া দোকানঘর সরানো হবে না বলে জানাতে এসেছে পুলিশ। বেলা ১১টা নাগাদ ভেবিয়ার স্কুলটির ছাত্রছাত্রীরা রাস্তা অবরোধ শুরু করে। বসিরহাট-মালঞ্চ রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছু ক্ষণ পরে উত্তেজিত ছাত্রেরা স্কুলের সামনে থাকা জমি থেকে দোকান ভাঙচুর শুরু করে। দাঁড়িয়ে থেকে গোটা ঘটনা দেখা ছাড়া কার্যত পুলিশের অন্য ভূমিকা ছিল না।

কয়েক জন ছাত্রের কথায়, “কয়েক জন গায়ের জোরে স্কুলের জমি দখল করে সেখানে ব্যবসা শুরু করেছে। সেখানে বসে দুষ্কৃতীরা প্রায়ই ছাত্রছাত্রীদের কটূক্তি করে। প্রতিবাদ করলে দেখে নেবে বলে। মদের বোতল স্কুলের মাঠে ছোড়ে। ওই বোতলের ভাঙা কাচে আমাদের পা কাটে।” ওই ছাত্রদের বক্তব্য, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে জানালেও কোনও কাজ হয়নি।

ব্যবসায়ীদের তরফে সন্তু ঘোষ, কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, উদয় মণ্ডলরা বলেন, ‘‘গত ২৫-৩০ বছর হল আমরা স্কুলের সামনে দোকান করে সংসার চালাচ্ছি। সকলের লাইসেন্স এবং বিদ্যুতের মিটারও আছে। গত ১৯৯১ সালে স্কুলের তত্‌কালীন প্রধান শিক্ষক সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্টলের ভাড়া বাবদ রসিদও দিতেন।” তাঁরা জানান, পরবর্তী সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এককালীন ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে এবং নির্দিষ্ট কিছু শর্তে পাকা দোকানঘর করে দেওয়া প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ সবের পরেও পুলিশের কাছ থেকে নোটিস পাওয়ার পরে মহকুমাশাসকের কাছে দরবার করা হয়েছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সুষ্ঠ ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। অথচ বিনা নোটিসে পুলিশের উপস্থিতিতে দোকান ভেঙে দেওয়া হল। লুঠপাট হল জিনিসপত্র। সমস্যার সমাধানে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন