গ্রেফতার আরও ৩

সোদপুরে ডাকাতিতে বাংলাদেশ-যোগ

সোদপুরের গয়নার দোকানে ডাকাতি-রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে একটু একটু করে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার আরও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যে মিনিডরে চেপে দুষ্কৃতীরা ডাকাতি করতে এসেছিল, সেটিও আটক করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০০:০৮
Share:

ডাকাতিতে ব্যবহৃত সেই গাড়ি। — নিজস্ব চিত্র

সোদপুরের গয়নার দোকানে ডাকাতি-রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে একটু একটু করে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার আরও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যে মিনিডরে চেপে দুষ্কৃতীরা ডাকাতি করতে এসেছিল, সেটিও আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম অতীশ রায়, দেবকুমার রায় ওরফে দেব এবং আবু বরকত ওরফে টুটুন। পুলিশের দাবি, শাসনের বাসিন্দা টুটুনই ডাকাতির মূল চক্রী। বৃহস্পতিবার ধৃতদের ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ডাকাতির মাথা হিসেবে নিউ ব্যারাকপুরের বিলকান্দার এক চোলাই ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। সমরেশ নামে ওই ব্যবসায়ীর সম্পর্কিত ভাই অতীশ। ডাকাতিতে ব্যবহৃত মিনিডরটির চালক ছিল সে। অতীশের বাড়ি নিউ ব্যারাকপুরের মাসুন্দায়। সেখানকারই তালবান্দার দেবকুমার দুষ্কৃতীদের ওয়ান শটার, গুলি ও বোমা দিয়েছিল। আবু বরকত ওরফে টুটুন সমরেশকে নিয়ে ওই গয়নার দোকানে রেইকি করে গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, ডাকাতিতে জড়িত সকলেরই বাংলাদেশের খুলনার সঙ্গে যোগ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তদন্তকারীরা।

৩০ জুন সোদপুরের বি টি রোড ও রাজা রোডের চৌমাথায় সেনকো অলঙ্কারে কর্মীদের মারধর করে ডাকাতি হয়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, গত বছর হরিদেবপুর কাষ্ঠডাঙায় একটি গয়নার দোকানে একই ভাবে ডাকাতি হয়েছিল। তার সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমে নিউ ব্যারাকপুরের লীলা কীর্তনিয়া নামে এক মহিলাকে জেরা শুরু করে। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু গয়না। পুলিশি জেরায় লীলা এই ঘটনায় তার ভাই গোলকের জড়িত থাকার কথা জানায়। গোলকের সঙ্গে বারাসতের বাসিন্দা গোপাল নামে এক জন ছিল বলে পুলিশ জানতে পারে। লীলার সঙ্গেই ধরা পড়ে স্বরূপনগরের অনিমেষ মণ্ডল। পুলিশ জানায়, বাংলাদেশি ডাকাতদের পারাপার করানোর দায়িত্ব ছিল তার। লীলা ও অনিমেষকে জেরা করে খোঁজ মেলে অতীশ, দেব ও টুটুনের।

Advertisement

পুলিশ জানায়, জনঘনত্বের জন্য ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল অপরাধ করে লুকিয়ে থাকার আদর্শ জায়গা। ডাকাতির তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে, যশোর রোড ও বি টি রোডের মাঝে বিলকান্দার মতো ঘিঞ্জি পঞ্চায়েত এলাকায় বাংলাদেশিদের অবাধ আনাগোনা। খুলনার বহু মানুষ এখানে থাকেন। তাঁরা নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করেন। রাজারহাট, বাগুইআটি চত্বরে গজিয়ে ওঠা পানশালাগুলিতেও এই অঞ্চলের বহু লোক কাজ করেন। ওই পানশালাগুলি থেকেই স্মাগলিংয়ের ছক তৈরি হয় বলে জেনেছে পুলিশ। ধৃত তিন জনকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, সমরেশও একটি পানশালায় কাজ করত। এখন সে স্মাগলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। বিলকান্দায় চোলাইয়ের ভাটিও আছে সমরেশের। সেখানেই সে ডাকাতির ছক কষেছিল বলে তদন্তকারীরা জানান। ঘটনার পর থেকেই সমরেশ পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত তদন্ত শেষ করব। বাংলাদেশ থেকে এসে যে ভাবে এখানে ডাকাতি করা হয়েছে, তাতে সেখানকার অনেকেই জড়িত বলে আমাদের অনুমান ছিল। এই অপরাধ ছাড়াও আরও কী কী অপরাধ আগে হয়েছে, সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন