শিশু-মৃত্যুতে ৩০ লক্ষ জরিমানা অ্যাপোলোর

জরিমানার টাকা কী ভাবে মেটাতে হবে, তা-ও ঠিক করে দিয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, ৩০ লক্ষ টাকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে কুহেলীর অভিভাবকদের। বাকি টাকা মেটাতে হবে তিন সপ্তাহের মধ্যে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০৪:০৫
Share:

কুহেলী চক্রবর্তী

পাঁচ মিনিটের কোলনোস্কোপির জন্য একটি শিশুকে যদি তিন দিনের বেশি হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়, সেটাকে কোনও ভাবেই চিকিৎসার ‘স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল’ বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছে রাজ্য চিকিৎসা কমিশন।

Advertisement

এবং চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে চার মাসের সেই শিশু, কুহেলী চক্রবর্তীর মৃত্যুর ঘটনায় অ্যাপোলো গ্লেনেগ্‌লস হাসপাতালের ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে পশ্চিমবঙ্গ ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন। শুক্রবার কমিশনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, হাসপাতালে পরিষেবায় ঘাটতি ও গাফিলতি প্রমাণিত হওয়ায় এই জরিমানা করা হলো।

জরিমানার টাকা কী ভাবে মেটাতে হবে, তা-ও ঠিক করে দিয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, ৩০ লক্ষ টাকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে কুহেলীর অভিভাবকদের। বাকি টাকা মেটাতে হবে তিন সপ্তাহের মধ্যে। অন্যথায় ওই টাকার উপরে ন’শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে অ্যাপোলোকে। কমিশন তৈরি হওয়ার পরে এই প্রথম তারা কোনও রায় ঘোষণা করল। তবে কুহেলীর অভিভাবকেরা জানান, তাঁরা টাকা চান না। দোষী চিকিৎসকদের শাস্তিই তাঁদের একমাত্র কাম্য।

Advertisement

হরিদেবপুরের বাসিন্দা অভিজিৎ চক্রবর্তী ও সালু চক্রবর্তীর মেয়ে কুহেলীকে ১৫ এপ্রিল ইএসআই জোকা থেকে কোলনোস্কোপির জন্য অ্যাপোলোয় ভর্তি করানো হয়। ১৯ এপ্রিল তার মৃত্যু হয় সেখানেই। ২৩ এপ্রিল কুহেলির বাবা-মা চিকিৎসা কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন। ৫ জুন কমিশনের প্রথম শুনানি হয়।

শিশুটির চিকিৎসায় কী ধরনের গাফিলতি হয়েছে হাসপাতালে?

কমিশন বলেছে, মেডিক্যাল রেকর্ড থেকে এটা পরিষ্কার যে, ১৫ এপ্রিল ভর্তির পর থেকে ১৭ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত শিশুটি অ্যাপোলোয় কার্যত কোনও চিকিৎসাই পায়নি। তার শরীরে জলের পরিমাণও মাপেননি চিকিৎসকেরা। অ্যাপোলোর গড়া তদন্ত কমিটিও নিরপেক্ষ ছিল না বলে মন্তব্য করেছে কমিশন।

হাসপাতালে পরিষেবার ঘাটতি, চিকিৎসক ও নার্সদের কাজকর্মে সমন্বয়ের অভাব এবং চিকিৎসকদের কর্তব্যে গাফিলতি নিয়ে অ্যাপোলোকে প্রবল ভাবে দোষারোপ করেছে চিকিৎসা কমিশন। অ্যাপোলোয় অব্যবস্থার ছবি তুলে ধরে তারা বলেছে, ওই হাসপাতাল ভুল তথ্য দিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, চিকিৎসক মহেশ গোয়েনকা, ভি আর শ্রীবাস্তব এবং সঞ্জয় মহাবরের তরফেই শিশুটির চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে। খতিয়ে দেখার জন্য চিকিৎসকদের বিষয়টি পাঠানো হচ্ছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে।

অ্যাপোলো-কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা কমিশনকে সম্মান করলেও তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। এই রায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ জায়গায় আবেদন করবেন তাঁরা। অ্যাপোলো বিবৃতিতে জানায়, ‘আমরা মনে করি, এই ধরনের সিদ্ধান্ত চিকিৎসক মহলকে বিভ্রান্ত করবে এবং তাঁরা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও বড় চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাবেন।’ অ্যাপোলোর দাবি, তারা বিশ্ব মানের পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন