বিষের চোরাকারবারের জন্যই এ রাজ্য থেকে ৩২টি সাপ উত্তরপ্রদেশে পাচার করা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার হাওড়া স্টেশন এলাকা থেকে সর্পবিশারদ দীপক মিত্রের ছেলে দেবাঞ্জন মিত্র এবং তাঁর এক শাগরেদ গোপাল কৈপুত্তুরকে গ্রেফতার করার পরে এমন়টাই জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রক সূত্রের খবর, ধৃতদের কাছ থেকে একটি চন্দ্রবোড়া, দু’টি কালাচ এবং বাকি ২৯টি কেউটে ও গোখরো সাপ মিলেছে। সব ক’টিরই বিষ দাঁত অক্ষুণ্ণ ছিল। তা থেকেই তদন্তকারীদের সন্দেহ তৈরি হয়, বিষের কারবারের জন্যই এই সাপ পাচার। শুক্রবার ধৃতদের হাওড়া আদালতে হাজির করানো হলে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের অধীনস্থ ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাপের বিষের প্রতিষেধক ‘অ্যান্টি-ভেনম সিরাম’ (এভিএস) তৈরির ক্ষেত্রে চন্দ্রবো়ড়া, কালাচ, কেউটে এবং গোখরো সাপের প্রয়োজন সব থেকে বেশি। এভিএস-এর ‘মাস্টার সিরাম’ তৈরিতেও এই চার ধরনের সাপের বিষ লাগে। ফলে দেবাঞ্জনদের সাপ পাচারের উদ্দেশ্য যে বিষের চোরাকারবার, সে ব্যাপারে সন্দেহ জোরালো হচ্ছে তাঁদের।
বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাদুতে দীপকবাবুর একটি সর্পোদ্যান ছিল। সাপের বিষ নিষ্কাশনের কাজও করতেন তিনি। কিন্তু বছর দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশে সেই সর্পোদ্যান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাপ, গোসাপ ও কুমিরগুলি উদ্ধার করে চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। পরবর্তী কালে দীপকবাবুর বাড়িতে হানা দিয়ে ময়াল সাপ উদ্ধার হয়েছে। এর পর থেকে রাজ্যে সাপের বিষের কারবারের অনুমতি স্থগিত রেখেছে বন দফতর। সে কারণেই এ রাজ্য থেকে সাপ ধরে ভিন রাজ্যে পাচার শুরু হয়েছে বলে মনে করছে বন দফতরের একাংশ।
দীপকবাবু অবশ্য ছেলের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘বাদুতে ছেলে সাপ নিয়ে কিছু জ্ঞান রপ্ত করেছিল। এমন হবে ভাবিনি।’’ যদিও রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার একটি সূত্র জানাচ্ছে, দেবাঞ্জন ছোট থেকেই সাপ নিয়ে ওয়াকিবহাল। সর্পোদ্যানে সাপের খেলাও দেখাতেন। অন্য ধৃতের বাড়ি বাদুতে। ফলে পুরনো শাগরেদদের নিয়েই তিনি এই কারবার শুরু করেছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।
বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি রাজ্যে একের পর এক সাপের বিষ পাচারের চক্র ধরা পড়ার পরে পুলিশ এবং বন দফতরের গোয়েন্দারা সক্রিয় হয়েছেন। সম্প্রতি খবর মিলেছিল কুম্ভ এক্সপ্রেসে দেবাঞ্জনেরা সাপ পাচার করবে। তার পর থেকেই ওত পাতেন সিআইডি, ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো (ডব্লিউসিসিবি) এবং হাওড়া বন দফতরের আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার তিনটি ব্যাগে পুরে সাপ নিয়ে ট্রেন ধরার জন্য হাওড়া স্টেশন চত্বরে ঢুকতেই তিন বিভাগের যৌথ দল দেবাঞ্জনদের পাকড়াও করে। ডব্লিউসিসিবি-র এক কর্তা বলছেন, এ ধরনের অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয় প্রয়োজন। সেই সমন্বয় থাকলে অপরাধ আটকানো যে সম্ভব তা এ ক্ষেত্রেই প্রমাণ হয়েছে। বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এমন ধরনের অপরাধের আরও রাজ্যে ঘটছে। সেগুলির সঙ্গে জড়িতদেরও পাকড়াও করার চেষ্টা চলছে।