সড়ক সম্প্রসারণ

জমি মিললেও এ বার ঋণের জটে ৩৪ নম্বর

গেরোর পর গেরো। জট যেন আর কাটছে না। একটা যায়, তো নতুন আর একটা গজিয়ে ওঠে! বাম আমলে ছিল জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ‘বিরোধীদল’ তৃণমূলের আন্দোলন। পরে যখন তৃণমূল সরকারে এল, তখন তাদেরই জমি-নীতির জেরে থমকে গেল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

গেরোর পর গেরো। জট যেন আর কাটছে না। একটা যায়, তো নতুন আর একটা গজিয়ে ওঠে!

Advertisement

বাম আমলে ছিল জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ‘বিরোধীদল’ তৃণমূলের আন্দোলন। পরে যখন তৃণমূল সরকারে এল, তখন তাদেরই জমি-নীতির জেরে থমকে গেল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ। এখন কোনও মতে প্রয়োজনের ৮০% জমি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)-এর হাতে এসেছে। কিন্তু এ বার বেঁকে বসেছে ঋণদাতা ব্যাঙ্কগুলো।

ব্যাঙ্ক বলছে, জমির অভাবে বছরের পর বছর কাজের গতি থমকে থেকেছে। ফলে প্রকল্পের খরচ বেড়েছে অনেক। এমতাবস্থায় ঠিকাদার সংস্থাগুলোকে আর বেশি ঋণ দিতে তারা রাজি নয়। অন্য দিকে ঠিকাদারদের একাংশের বক্তব্য: ব্যাঙ্ক-ঋণের অঙ্ক না-বাড়লে তাদের পক্ষে নতুন করে কাজে হাত দেওয়া অসম্ভব। এই টানাপড়েনে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ ফের পড়েছে অনিশ্চয়তার জাঁতাকলে। দিশা পাওয়ার জন্য সড়ক মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছেন এনএইচএআই-কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রক যেমন সিদ্ধান্ত নেবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।

Advertisement

নবান্নের তথ্যানুযায়ী, বারাসত থেকে ডালখোলা পর্যন্ত চারশো কিলোমিটার রাস্তা চার লেন করার প্রকল্পে ২০০৬-এ ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্র। দু’বছর বাদে গোটা প্রকল্পের জন্য ১৩৪২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের তদানীন্তন বাম সরকার। কিন্তু তৎকালীন বিরোধীদল তৃণমূলের লাগাতার আন্দোলনের জেরে তারা এক ছটাকও জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। ২০১১-য় পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদল হয়। বামফ্রন্টকে উৎখাত করে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি, এনএইচ-৩৪ সম্প্রসারণ আটকেই থাকে। ২০১২ নাগাদ কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করলে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়।

এনএইচএআই জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মোট প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমির ৮০% তারা হাতে পেয়েছে। যদিও তাতে বিস্তর কাঁটা। কী রকম?

কারণ, বহু জমির দখল কাগজে-কলমে হস্তান্তর হলেও সেখানে দিব্যি দোকান-ঘরবাড়ি রয়েছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে হেতু বলপ্রয়োগে উচ্ছেদের বিরোধী, তাই ওই জবরদখলকারীদের গায়ে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘নদিয়ার দেবগ্রাম, পলাশি, ধুবুলিয়া, চাকদহ, জাগুলি, রানাঘাট ও মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, ফরাক্কা, রেজিনগরের মতো বহু জায়গায় জবরদখলকারীরা সরকারি জমি কব্জা করে রয়েছে। এমনকী, অনেকে সরকারের থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়ার পরেও জমি ছাড়ছে না!’’ নিষ্ক্রিয়তার জন্য আঙুল উঠছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের দিকেও। এনএইচএআই-সূত্রের খবর: বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করতে ১৯৭ হেক্টর জমি দরকার বলে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছিল। মিলেছে ৮০%। কৃষ্ণনগর-বহরমপুর ৭৮ কিলোমিটার সম্প্রসারণ বাবদ ১০৫ হেক্টর চেয়ে মিলেছে ৮৮%। আবার জবরদখলের জটে বেথুয়াডহরিতে এক ছটাকও পাওয়া যায়নি। একই ভাবে উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে দীর্ঘ দিন জমি না-মেলায় ঠিকাদার সংস্থা কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। মাস চারেক আগে অবশ্য জমি হাতে এসেছে। কিন্তু তাতে সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না। ‘‘রাস্তার ক্ষেত্রে খেপে-খেপে জমি পেলে কাজ এগোয় না। এনএইচ থার্টিফোরে তা-ই হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশের বেশি কাজ হয়নি।’’— পর্যবেক্ষণ এক পূর্ত-কর্তার। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ব্যাঙ্ক, ঠিকাদার, জবরদখল ইত্যাদি সমস্যা পরের পর ঘাড়ে চেপে বসছে, তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা বিশ বাঁও জলে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন