ফেল করল ৩৮,০০০ নাটবল্টু!

স্কাইওয়াকের নির্মাণকাজের গুণগত মান দেখার দায়িত্বে থাকা রাইটসের বিশেষজ্ঞেরা নাটবল্টুগুলি পরীক্ষা করেন। শারীরিক ক্ষমতার (বহন ক্ষমতা) দিক থেকে পাশ করে গেলেও ওই সমস্ত নাটবল্টুর রাসায়নিক মানে সামান্য সমস্যা মেলে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৫
Share:

নির্মীয়মাণ: দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক তৈরির কাজ চলছে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

‘পরীক্ষা’য় বসতেই ডাহা ফেল! আর তাতেই বাতিল ৩৮ হাজার ‘পরীক্ষার্থী’!

Advertisement

শেষমেশ ফের জোগাড় করতে হল ৩৮ হাজার ‘পরীক্ষার্থীকে’। চুলচেরা পরীক্ষার পরে পাশ করল তারা। যাদের ব্যবহার করা হচ্ছে দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকের কাজে।

নির্মাণ সংস্থা সূত্রের খবর, গত জানুয়ারির শেষের দিকে স্কাইওয়াকের লোহার স্তম্ভের সঙ্গে পাত দিয়ে বিম জোড়ার জন্য আনা হয়েছিল ৪, ৫ ও ৬ ইঞ্চি এবং অন্যান্য মাপের মোট ৩৮ হাজার নাটবল্টু। তার মধ্যে প্রথমে ব্যবহার করা হয়েছিল ১২০০টি। স্কাইওয়াকের নির্মাণকাজের গুণগত মান দেখার দায়িত্বে থাকা রাইটসের বিশেষজ্ঞেরা নাটবল্টুগুলি পরীক্ষা করেন। শারীরিক ক্ষমতার (বহন ক্ষমতা) দিক থেকে পাশ করে গেলেও ওই সমস্ত নাটবল্টুর রাসায়নিক মানে সামান্য সমস্যা মেলে। জানা গিয়েছে, ওই নাটবল্টুর মধ্যে সালফার, কার্বন ও ফসফরাস —এই তিনটি রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে। তার মধ্যে ফসফরাসের পরিমাণ সামান্য বেশি ছিল।

Advertisement

নির্মাণ সংস্থা সূত্রের খবর, ওই নাটবল্টুগুলির স্থায়িত্ব খুব কম করে হলেও ২০০ বছর। এমনকি, ৩৬৫ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা হলে তবেই ‘ফেল’ করা নাটবল্টুগুলি গলতে পারে। তবে কোনও প্রকার ঝুঁকি নিতে চাননি বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা চেয়েছেন, নাটবল্টুর স্থায়িত্ব হোক কয়েক হাজার বছর। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘কোনও রাসায়নিকের পরিমাণ যদি একটু এ দিক-ও দিক হয়, তা হলে স্থায়িত্বে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরীক্ষায় ওই নাটবল্টুরা ফেল করেছিল।’’ তিনি আরও জানান, পূর্ব ভারতে যে তাপমাত্রা মেনে কাজ করতে হয়, স্কাইওয়াকে ব্যবহৃত লোহার ক্ষেত্রেও তা মানা হয়েছে।

পোস্তা উড়ালপুলের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই রাজ্য সরকার স্কাইওয়াকের কাজে এতটা সাবধানী মনোভাব নিয়েছে। লোহা থেকে শুরু করে সব কিছু জিনিসই রাইটস-সহ আরও একটি সংস্থাকে দিয়ে পরীক্ষা করার পরে তবেই ছাড়পত্র মিলছে। রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কাজের গুণগত মানে কোনও রকম আপস করতে রাজি নই। তাই দু’টি সংস্থাকে দিয়ে সব পরীক্ষা করিয়ে তাদের পরামর্শ মেনেই কাজ করা হচ্ছে। তাতে একটু সময় লাগছে।’’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘প্রথমে দোকানদারদের পুনর্বাসন নিয়ে জট এবং পরে পাইলিংয়ের সময়ে বর্ষা এসে যাওয়াতেই সমস্যা বেশি হয়েছে। তবে দায়সারা না করে একটু সময় নিয়ে ভাল কাজ করাই উচিত। আশা করছি, পুজোর মধ্যেই স্কাইওয়াক চালু হবে।’’ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরীর কথায়, ‘‘বিশেষ কোনও অনুষ্ঠান ও পার্বণে কয়েক লক্ষ দর্শনার্থী মন্দিরে আসেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই সুরক্ষা ব্যবস্থায় এতটা জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

নির্মাণ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কাইওয়াকের উপরে পলিকার্বন শিটের ছাউনির নীচে ৫০ ওয়াটের প্রায় ৩০০টি এলইডি পাইপলাইট এবং গাড়ি চলার রাস্তায় ৪৫টি এলইডি স্মার্ট আলো ব্যবহার করা হয়েছে। অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার জন্য ৬৫ হাজার লিটারের জলাধার তৈরি হয়েছে ভূগর্ভে।
স্কাইওয়াকের উপরে ১৫০টি দোকানেই লাগানো হয়েছে আগুনের বিপদঘন্টি। এক কর্তার কথায়, ‘‘স্কাইওয়াকে হাঁটার সময়ে কোনও ভাবেই ধূমপান করা যাবে না।’’ স্কাইওয়াকের নীচের রাস্তা ও উপরের জায়গা মিলিয়ে ৩০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। জলীয় আবহাওয়া এবং জলের প্রভাবে যাতে লোহায় মরচে না পরে, তার জন্য জাহাজে ব্যবহৃত ‘পলি ইউরিথিন’ রং লাগানো হচ্ছে স্কাইওয়াকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন