প্রতীকী ছবি।
ভরদুপুরে পড়শিরা ছুটে এসেছিলেন বাড়িতে। বলেছিলেন, ‘‘ও নমিতা শিগ্গির এসো। টিভিতে ইরাক নিয়ে খবর দেখাচ্ছে।’’ পড়িমরি পাশের বাড়িতে ছুটেছিলেন নমিতা সিকদার। পিছু নিয়েছিল দুই ছেলেমেয়েও। টিভির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সংজ্ঞা হারান নমিতা। কান্নার রোল ওঠে নদিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম ইলশামারিতে।
মহখোলা সীমান্তের দীপালি টিকাদার এ দিন বাড়িতে ছিলেন না। মোবাইল বন্ধ থাকায় দিনভর কোনও খবর পাননি। সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে পাল্টা তিনিই জানতে চান, ‘‘কোনও খবর পেলেন? লোকটা বেঁচে আছে তো?’’
গত চার বছর ধরে যে আশাটা মরতে মরতেও মরেনি, মঙ্গলবার দুপুরে তার ইতি পড়ল। রাজ্যসভায় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানালেন, ইরাকে অপহৃত ৩৯ ভারতীয় আর বেঁচে নেই। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নমিতা ও দীপালির স্বামী খোকন সিকদার ও সমর টিকাদারও।
২০১১ সালে খোকন ও সমর পাড়ি দেন ইরাকে। খোকন রাজমিস্ত্রি। সমর কাঠের কাজ করতেন। ইরাকে দু’জনে থাকতেনও একসঙ্গে। সেখান থেকে পাঠানো টাকায় শোধ হল মহাজনের দেনা। সবে শ্রী ফিরতে শুরু করেছিল সংসারে। ২০১৩-এর নভেম্বরে বাড়ি ফিরলেন সমর। খোকন ফোনে জানালেন, ফিরবেন পরের বছর। দুই ছেলেমেয়েকে রেখে সমর ফিরে গেলেন ইরাকে। বছর পাঁচেকের মেয়েকে বলে গেলেন, ‘‘পরের বার তোর জন্য নূপুর আনব।’’
নূপুর আর আনা হয়নি সমরের। ২০১৪ সালের ১৫ জুন ইরাক থেকে বাড়িতে ফোন করেছিলেন তিনি। আর খোঁজ মেলেনি। খোকনের সঙ্গে নমিতার শেষ কথা হয় ১২ জুন।
‘লোকটা বেঁচে আছে তো?’— এই প্রশ্নের উত্তর পেতে নেতা-মন্ত্রীদের দোরে দোরে ঘুরেছেন নমিতা ও দীপালি। উত্তর মেলেনি। ২০১৬-তে দু’জনকেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চাকরি দেয় জেলা প্রশাসন। নমিতা বলছেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে ব্লক অফিস থেকে ছেলে, মেয়ে ও ননদের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। তখনই মনে কু ডেকেছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’’