জমি কাড়ছে মাফিয়ারা, ফের নবান্নে এসে নালিশ

সাহস বাড়ছে মানুষের। বাড়ছে সরাসরি প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

সাহস বাড়ছে মানুষের। বাড়ছে সরাসরি প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস।

Advertisement

সম্প্রতি নবান্নে এসে বীরভূমের পাড়ুইয়ের যুবক মিঠুন গড়াই তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে তোলা চাওয়ার অভিযোগ করে দরবার করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর দেখানো পথেই এ বার আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অনুগামী’দের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন বার্নপুরের চার জন।

বার্নপুরের হিরাপুর থানার শ্যামবাঁধ এলাকার বাসিন্দা বাদল দত্ত, দীনেশ প্রসাদ, সন্তোষ গড়াই ও সুকুমার দত্ত নিজেদের তৃণমূল কর্মী বলেই দাবি করেছেন। সোমবার নবান্ন চত্বরে তাঁরা অভিযোগ করেন, ২০১৪ থেকেই তাঁদের এলাকায় জমি-মাফিয়াদের দাপট দেখা যাচ্ছে। এর আগে তাঁরা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী মলয় ঘটক ও জেলা প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। মলয়বাবু ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জানিয়েও দীনেশবাবুদের দাবি, বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করায় লাগাতার প্রাণনাশের হুমকি শুনতে হচ্ছে।

Advertisement

বাদলবাবু অভিযোগ করেন, তাঁর চার বিঘা জমি জবরদখল হয়ে গিয়েছে। ৩০০ বিঘা খাস জমিও এলাকার জমি-মাফিয়াদের দখলে। দীনেশবাবুর দাবি, সম্প্রতি দু’টি মৌজার বেশ কয়েক বিঘা জমি ‘মাফিয়ারা’ দখল করতে গেলে বাধা দেন তিনি। তার পরেই ওই চক্রে জড়িত সুরেশ যাদব, আহমেদুল্লা খান-সহ বেশ কয়েক জন তাঁর উপরে চড়াও হয়। আরও অভিযোগ, জাল নথি বানিয়ে চাষিদের জমি জবরদখল করা হচ্ছে। পুকুর বেচতে রাজি না হলে, বিষ মিশিয়ে মাছ মেরে ফেলা হচ্ছে। এরই প্রতিকার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে আবেদনপত্র জমা দেন ওই চার জন। সেখানে নির্দিষ্ট কোনও তৃণমূল নেতার নাম না লিখলেও সংবাদমাধ্যমের কাছে বাদলবাবুরা দাবি করেন, ‘‘জমি-মাফিয়ারা বিধায়ক তাপসবাবুর অনুগামী।’’

ক্ষমতার দ্বিতীয় ইনিংসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট-চক্রে দলের নেতা-কর্মীদের না জড়ানোর বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও তোলাবাজি-সহ তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় দলের কর্মীকে খুনের চেষ্টা— এমন বিভিন্ন অভিযোগে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের নেতাদের। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বর্ধমান সফরের দিন মন্ত্রী মলয়বাবুর কাউন্সিলর ভাই অভিজিৎ ঘটকের দলবলের বিরুদ্ধেই তোলাবাজির অভিযোগ তুলে আসানসোল থেকে সমস্ত রুটের মিনিবাস বন্ধ করে দিয়েছিল তৃণমূলেরই পরিবহণ কর্মী সংগঠন। তবে, ওই ঘটনার ঠিক পরেই মলয়বাবুর পাশের কেন্দ্রের বিধায়ক এবং প্রাক্তন মেয়র তাপসবাবুর ‘সঙ্গী’দের নামে এমন অভিযোগ ওঠাকে পুরোপুরি কাকতালীয় বলে মানতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ।

তাপসবাবুর মন্তব্য, ‘‘আমার যে কোনও অনুগামী আছে, তাই জানি না। কে, কোথায় জুলুম করবে আর তায় দায় নিতে হবে আমায়?’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তাপস-ঘনিষ্ঠদের দাবি, ‘‘তাপসদা’র গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টা করছেন জেলার তাবড় এক নেতাই।’’ রাত পর্যন্ত মলয় ঘটকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তৃণমূলের আসানসোল জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে দু’-এক জনের নাম উঠে এলে দলের তরফে তাঁদের নোটিস পাঠানো হয়। তাঁরা জমি-কারবারে জড়িত থাকার কথা মানেননি।’’ মহকুমাশাসক (আসানসোল) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ডাকযোগে এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।’’

অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, মিঠুনের ঘটনাই তাঁদের সাহস বাড়িয়েছে। যা শুনে পাড়ুইয়ের মিঠুন বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তোলাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। সবাই তাতে ভরসা রাখছেন—এটা তো ভাল কথা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন