West Bengal Budget 2025

৪৪ হাজার কোটি! গ্রামে সর্বোচ্চ বরাদ্দ করে কাদের মন জিততে চান মমতা, বাজেট জুড়ে নির্বাচনী অঙ্ক

২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বেশির ভাগ কেন্দ্রই গ্রামে। সেই ভোট নির্বাচনের ‘নির্ণায়ক’ হয়ে দাঁড়ায়। আশ্চর্য নয় যে, গ্রামকে গুরুত্ব দিয়েই এ বারের বাজেটের অঙ্ক কষা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:২১
Share:

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করা হয়েছে বুধবার। —ফাইল চিত্র।

বাজেটে পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন বিভাগের জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বুধবার রাজ্য বিধানসভায় আগামী অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করেছেন চন্দ্রিমা। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যা মমতা সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। প্রত্যাশিত ভাবেই তাই বাজেটের ছত্রে ছত্রে নির্বাচনী অঙ্ক। যে অঙ্কের হিসাব মেনে গ্রামের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। এ বছরের বাজেটে আর কোনও ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বরাদ্দের উল্লেখ নেই। পুর ও নগরোন্নয়ন বিভাগে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা।

Advertisement

২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বেশির ভাগ কেন্দ্রই গ্রামে। ১৭০ থেকে ১৮০টি আসনের গ্রামীণ ভোট প্রতি বার নির্বাচনের ‘নির্ণায়ক’ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে গ্রামকে যে এ বারের বাজেটে দু’হাত ভরে দেওয়া হবে, তা খানিকটা প্রত্যাশিতই ছিল। বাজেট ঘোষণা করতে গিয়ে ‘পথশ্রী’ থেকে ‘বাংলার বাড়ি’— একাধিক গ্রামকেন্দ্রিক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা জানান চন্দ্রিমা। ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে আগামী অর্থবর্ষে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে ৯,৬০০ কোটি টাকা। চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবর্ষে ১২ লক্ষ পরিবারকে পাকাবাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবর্ষে এই টাকা পাবে আরও ১৬ লক্ষ পরিবার।

বাজেটে কৃষিজ পণ্যের বিপণন বিভাগে ৪২৬ কোটি, কৃষিবিভাগে ১০ হাজার কোটি, প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন বিভাগে ১,২৭২ কোটি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্ত বিভাগে ৭৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণাও করেছেন চন্দ্রিমা। জানিয়েছেন, ৭০ হাজার আশাকর্মী পাবেন ‘স্মার্টফোন’। প্রতি বছর বর্ষায় নদীর পার ভাঙনের জন্য গ্রামাঞ্চলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ বারের বাজেটে তার জন্যও আলাদা বরাদ্দ রয়েছে। নতুন ‘নদী বন্ধন’ প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।

Advertisement

বস্তুত, বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে গ্রামের মন জয়ের চেষ্টা আগেই শুরু করেছে শাসক তৃণমূল। রাজ্যের শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিজের পকেট থেকে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। বাংলায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ওই খাতে দু’বছর টাকা পাঠানো বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই টাকা রাজ্য সরকার দিতে শুরু করে দিয়েছে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই। মমতা জানান, সাড়ে ২৪ লক্ষ শ্রমিক ওই টাকা পাবেন। পাশাপাশি চালু করা হয় ‘কর্মশ্রী প্রকল্প’, যার মাধ্যমে ৫০ দিনের কর্মসংস্থান হবে গ্রামাঞ্চলের শ্রমিকদের। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন মমতা এবং দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ওই প্রকল্পে কেন্দ্রের সাহায্য বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে আবাসের পাল্টা হিসাবে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প চালু করা হয়। যার টাকা দেবে রাজ্য সরকারই। ওই প্রকল্পেরও বরাদ্দ বৃদ্ধি পেল এ বারের বাজেটে। কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে গ্রামসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দেও। বাজেট পেশের পরে জল্পনা শুরু হয়েছে এই মর্মে যে, ‘পথশ্রী’র বরাদ্দ বাড়িয়ে গ্রামের সড়ক নির্মাণ নিয়েও কেন্দ্রকে পাল্টা দিতে চেয়েছেন মমতা।

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী গণ আন্দোলন বড় আকার নিয়েছিল ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে। বিচার চেয়ে দিনের পর দিন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। এমনকি, জুনিয়র চিকিৎসকেরা আমরণ অনশনও শুরু করেছিলেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া এই ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত সরকারবিরোধী আন্দোলন সাম্প্রতিক অতীতে বিরল। অনেকে তা দেখে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের ভোটবাক্সে আরজি করের ‘প্রভাব’ পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মমতা পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন বলেই এখন মনে করে শাসক শিবির। শহরাঞ্চলে আরজি কর আন্দোলনের প্রভাব পড়লেও গ্রামে পড়েনি বলেই জেনেছিলেন শাসক শিবিরের নেতারা। বস্তুত, ওই আন্দোলনের পরেও রাজ্যের ছয় বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। যার সব ক’টি কেন্দ্রই গ্রামে। ফলে শাসকদল মনে করছে, গ্রাম তাদের পাশ থেকে সরে যায়নি। বাজেটে তার ‘প্রতিদান’ও রয়েছে বলে তৃণমূলের একাধিক প্রথম সারির নেতার অভিমত। অর্থাৎ, বিধানসভা ভোটের আগে সেই গ্রামের ‘ঘাঁটি’ আরও পোক্ত করছে তৃণমূল।

বাজেটে গ্রাম যে বেশি ‘গুরুত্ব’ পেয়েছে, তা অবশ্য প্রকাশ্যে মানতে চাননি মমতা। বাজেট পেশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গ্রাম-শহরের অর্থনীতির মেলবন্ধনের কথা বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পাশাপাশিই শহরের অর্থনীতিও পুষ্ট হবে। আমরা মেলবন্ধন করতে চাই।’’ তবে গ্রামোন্নয়নের খাতে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণই ছবি স্পষ্ট করে দিচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement