এ বার রাজ্যের আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের হাতে হাতে তুলে দেওয়া হবে স্মার্টফোন। বুধবার রাজ্য বাজেট পেশ করার সময় এমনটাই জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এমনকি, প্রায় ৭০ হাজার আশাকর্মী এবং লক্ষাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর স্মার্টফোন কেনার জন্য বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য, যে খবর শোনার পর থেকেই খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে গ্রাম বাংলায়!
বুধবার রাজ্য বাজেট পেশ করার সময় চন্দ্রিমা ঘোষণা করেন, রাজ্যের প্রায় লক্ষাধিক আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার জন্য এ বারের বাজেটে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা তৃণমূল স্তরে জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও স্থানীয় মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধন করেন। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা প্রদান করেন। এ ছাড়াও, অন্যান্য অ-সংক্রামক ব্যাধি যেমন, ডেঙ্গু, রক্তচাপ, মধুমেহ, যক্ষ্মা, ক্যানসার ইত্যাদি রোগের নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই এঁদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে কাজের সুবিধার জন্য সরকার ৭০ হাজার আশাকর্মী এবং এক লক্ষেরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীকে স্মার্টফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে তাঁরা আরও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।’’
রাজ্যের যুক্তি, আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বিভিন্ন কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সরকারি অ্যাপ ডাউনলোড করতে হয়। অথচ কর্মীদের বেশির ভাগেরই স্মার্টফোন কেনার সাধ্য নেই। যে ভাতা তাঁরা পান, সেই টাকায় স্মার্টফোন কেনাও তাঁদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। সে কারণেই তাঁদের মোবাইল দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য। এ জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রাজ্যের সিদ্ধান্তে খুশি অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীরা। হুগলির আশাকর্মী মিতা সাহা, পিয়ালী দাস কিংবা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সুমিত্রা সরকারের কথায়, ‘‘অনেক সময়েই কাজ করতে গিয়ে ফোন হ্যাং করে যায়। অ্যাপ ডাউনলোড করা যায় না। সরকারি মোবাইল পেলে আমাদের কাজের খুব সুবিধা হত। বাড়িতে আমাদের একটাই ফোন। কখনও কখনও ছেলেমেয়েরা অনলাইনে পড়াশোনা করে। তখন আমরা ফোন নিয়ে বেরোতে পারি না। এত দিনে সেই সমস্যা দূর হবে।’’ এরই মধ্যে কেউ কেউ আবার বলছেন ভাতা বাড়ানোর কথা। তবে স্মার্টফোন হাতে পাওয়ার কথায় আপাতত উচ্ছ্বসিত সকলেই।
আরও পড়ুন:
যদিও এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এটা ভাঁওতা ছাড়া কিছু নয়। এই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা। দেশের অন্যান্য রাজ্যে অনেক আগে থেকেই আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা মোবাইল পেয়ে এসেছেন। এঁরা কেন পাননি?’’ একই সুর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেও। তাঁর দাবি, এই প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের। নিজের নামে চালানোর চেষ্টা করছে রাজ্য।
উল্লেখ্য, বুধবারই রাজ্য বিধানসভায় বাজেট পেশ করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা ভোট রয়েছে। তার আগে এটিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় দফার মুখ্যমন্ত্রিত্বের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আগামী বছর নির্বাচন থাকায় ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ পেশ করা হবে। সে ক্ষেত্রে এ বারের রাজ্য বাজেটে কোন কোন বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, সে দিকেই নজর ছিল সকলের।