খড়্গপুরে হাত ছেড়ে তৃণমূলে ৫ কাউন্সিলর

অস্তাচলে কংগ্রেসের রবি

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৮
Share:

কলকাতায় একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে রবিশঙ্কর পাণ্ডে-সহ দলত্যাগী পাঁচ কাউন্সিলর। রয়েছেন মুকুল রায়ও। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

‘চাচা’-র গড়ে আরও দুর্বল হল ‘হাত’। খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে-সহ পাঁচজন কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলেন বৃহস্পতিবার। কলকাতায় তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশে এই পাঁচজন দলবদল করেন। এর ফলে, খড়্গপুর পুরসভায় কংগ্রেসের আসন ১১ থেকে কমে হল ৬।

Advertisement

পুরসভা কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়েছিল আগেই। বিধানসভাতেও হার হয় খড়্গপুর সদরের কংগ্রেস প্রার্থী ‘চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহনপালের। তবে ভোট-যুদ্ধেও তাঁর ‘সেনাপতি’ ছিলেন রবিশঙ্কর। নব্বই পেরনো চাচাকে প্রার্থী করা নিয়েই দলের অন্দরে অসন্তোষের জন্ম। একাংশ কাউন্সিলর চেয়েছিলে, রবিশঙ্করবাবুকে প্রার্থী করা হোক। এরপর দশবারের বিধায়ক চাচার হারের পরে রেলশহরে কংগ্রেসের নড়বড়ে অবস্থাটা প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এই দলবদলে তা আরও বেআব্রু হল বলেই জেলার রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

এ দিন খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান, প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য রবিশঙ্কর পাণ্ডে ছাড়াও দলবদল করেছেন চার কাউন্সিলর— কল্যাণী ঘোষ, রামনা রাও, সনাতন যাদব এবং অরূপ কুণ্ডু। এর ফলে, ৩৫ আসনের খড়্গপুর পুরসভায় অবশ্য ক্ষমতার বিন্যাস কিছু পাল্টাচ্ছে না। কারণ, ১৮ আসন নিয়ে আগেই একক ভাবে পুরবোর্ড গড়েছে তৃণমূল। তবে এই দলবদলে পুরসভায় তৃণমূলের শক্তি বাড়ল। আসন বেড়ে হল ২৩। আর কংগ্রেসের আসন ১১ থেকে কমে দাঁড়াল ৬। বামেদের দখলে রয়েছে ৪টি আসন। আর বিজেপির হাতে রয়েছে দু’টি আসন।

Advertisement

রবিশঙ্করবাবু যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে খড়্গপুর পুরসভা কংগ্রেস শূন্য হওয়ার আশঙ্কা। দলত্যাগী প্রাক্তন পুরপ্রধান বলেন, ‘‘কংগ্রেসে আমরা বঞ্চিত হচ্ছিলাম। তাই নিঃশর্তে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। আপাতত পাঁচজন তৃণমূলে এলাম। পরে বাকি কাউন্সিলরেরাও তৃণমূলে যোগ দেবেন।’’ তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারও বলছেন, ‘‘আগামী দিনে খড়্গপুরে কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন হবে।”

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন।

অবশ্য বাকি ৬ জন কাউন্সিলর দলের সঙ্গে রয়েছেন বলেই দাবি কংগ্রেসের শহর নেতৃত্বের। খোদ চাচা বলেন, “কংগ্রেস থেকে অনেকে গিয়েছেন আবার অনেকে এসেছেন। কংগ্রেস ছিল, আছে ও ভবিষ্যতে থাকবে। আমাদের দলের পাঁচ কাউন্সিলরের চলে যাওয়া নিয়ে এখনই কিছু বলব না। দেখুন না কী হয়!” আর প্রবীণ বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, “খুব দুর্ভাগ্যজনক। এত দিনের পুরনো নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে কেন দলবদল করলেন তা নিয়ে চাচার সঙ্গে কথা বলব। তবে প্রদেশ কংগ্রেস
সভাপতি কী পদক্ষেপ করছেন সেটাও জানা প্রয়োজন।”

বাকি ছয় কাউন্সিলর সঙ্গে আছে বোঝাতে আগামী রবিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছে শহর কংগ্রেস। দলের শহর সভাপতি অমল দাস বলেন, “এই পাঁচজন চলে যাওয়ায় কংগ্রেস শেষ হয়ে যাবে না। বাকি ছয় কাউন্সিলর আমাদের সঙ্গে আছেন। যাঁরা দলবদল করে তাঁরা সুবিধাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী।”

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে অন্য বিরোধীরা। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক, অনিতবরণ মণ্ডলের মতে, “এই পাঁচ কাউন্সিলর ক্ষমতার অলিন্দে থাকতেই শাসকদলে যোগ দিয়েছেন। চাচার পরাজয়ে যে এই কাউন্সিলরদের অন্তর্ঘাত ছিল তা স্পষ্ট হয়ে গেল।” বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়ও এক সুরে বলেন, “ক্ষমতার লোভে ওঁরা দলবদল করেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন