এসটিএফের সাফল্য, পাকড়াও খাগড়াগড়ের ৬ জঙ্গি

বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন (জেএমবি)-এর হাত থেকে বিপন্মুক্ত নয় ভারত। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে ওই জঙ্গিরা বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার পরেও নয়। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের হাতে মামলার পাঁচ অভিযুক্ত-সহ ছয় জেএমবি জঙ্গি ধরা পড়ার পরে এটা ভালই বুঝতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১৬
Share:

ধৃত জেএমবি-র ছয় জঙ্গি

বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন (জেএমবি)-এর হাত থেকে বিপন্মুক্ত নয় ভারত। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে ওই জঙ্গিরা বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার পরেও নয়। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের হাতে মামলার পাঁচ অভিযুক্ত-সহ ছয় জেএমবি জঙ্গি ধরা পড়ার পরে এটা ভালই বুঝতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

জানা গিয়েছে, দেশের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নাশকতার ছক কষছে জেএমবি। ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় দু’কেজি সন্দেহজনক সাদা গুঁড়ো উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, ওটা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জাতীয় বিস্ফোরক। স্‌প্লিন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এমন বল বেয়ারিং, ডিটোনেটর ও ব্যাটারিও মিলেছে।

সোমবার কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (এসটিএফ) বিশাল গর্গ জানান, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে বর্ধমানের বাসিন্দা, জেএমবি-র শীর্ষ সংগঠকদের অন্যতম মহম্মদ ইউসুফ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর থেকেই সে ফেরার। ইউসুফকে পেতে ১০ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে বর্ধমানের আবুল কালাম ও বাংলাদেশি নাগরিক মহম্মদ রফিক। আবুলের হদিস পেতে তিন লক্ষ ও রফিকের জন্য এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সেই হিসেবে পুজোর মুখে ১৪ লক্ষ টাকা ‘বোনাস’ পেল কলকাতা পুলিশ। ২০১৪-র নভেম্বরে জেএমবি-র বর্ধমান মডিউলের চিফ মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে ১০ লক্ষ টাকা পায় বিধাননগর কমিশনারেট। বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারই এখন কলকাতার পুলিশ কমিশনার!

Advertisement

তবে এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, ‘‘সাজিদকে ধরে বিধাননগর পুলিশ আমাদের হাতে তুলে দেয়, গ্রেফতার করেনি। কিন্তু কলকাতা পুলিশের এসটিএফ এদের গ্রেফতার করেছে, নির্দিষ্ট মামলা রুজু করেছে।’’ তাই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশ কি পুরস্কার পাবে?’’

ইউসুফ ও আবুল কালামের বিরুদ্ধে খাগড়াগড় মামলায় এনআইএ চার্জশিট পেশ করেছে। বাকি ধৃতদের মধ্যে রফিক, উত্তর-পূর্ব ভারতে জেএমবি-র প্রধান শহিদুল ইসলাম ও বাংলাদেশি নাগরিক জবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জশিট নেই। তবে তারা খাগড়াগড় মামলায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। এক গোয়েন্দা বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় জড়িত হিসেবে ওদের ভূমিকা স্পষ্ট। তবে চার্জশিট পেশ করার মতো তথ্যপ্রমাণ এখনও হাতে আসেনি।’’

আর এক ধৃত, বাংলাদেশি নাগরিক আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম ওরফে কালুভাইয়ের সঙ্গে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার কোনও সম্পর্ক এনআইএ পায়নি। তবে কলকাতা পুলিশের দাবি, ইনামই এই রাজ্যে জেএমবি-র সর্বোচ্চ পদে ছিল। ফলে সে খাগড়াগড়ের বিষয়ে কিছুই জানবে না, সে কথা মানতে নারাজ কলকাতা পুলিশ। এ দিন তিন বাংলাদেশি নাগরিক-সহ ওই ছ’জনকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

এনআইএ না পারলেও কলকাতা পুলিশ কী ভাবে সফল?

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জঙ্গিরা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখত। প্রযুক্তিগত কৌশলের সাহায্যে সেই সব কথা গোয়েন্দাদের হাতে আসে। তাতেই বাজিমাত হয়। তা ছাড়া, খাগড়াগড়ের পরে অধিকাংশ সময়ে অসম সীমান্ত দিয়ে জঙ্গিরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকত। অসমে বন্যা হওয়ায় তারা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত ব্যবহার করছিল। তাতেও গোয়েন্দাদের অনেকটা সুবিধে হয়।

গোয়েন্দারা জানান, গত সপ্তাহে অসমের কাছাড় থেকে জাল নোটের একটি মামলায় প্রথমে ধরা হয় জবিরুলকে। তাকে কলকাতায় এনে জেরার পরে বাকিদের হদিস মেলে। রবিবার নিউ কোচবিহার স্টেশনে গ্রেফতার করা হয় কালামকে। ওই দিনই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁ-বাগদা রোড থেকে গ্রেফতার করা হয় ইনাম ও রফিককে। ইনাম ও রফিকের বাড়ি বাংলাদেশে। রফিক বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী। আর জঙ্গিদের সীমান্ত পার করানো, লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা, এ সব করত রফিক।

ওই দু’জনকে গ্রেফতার করার পর বসিরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয় ইউসুফ ও শহিদুলকে। ইউসুফের কাছ থেকেই সন্দেহজনক সাদা গুঁড়ো মেলে। ইউসুফের স্ত্রী আয়েষা পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র নারী বাহিনীর প্রধান বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। তারও খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন