সূচনা: নিজের লেখা বই হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সল্টলেকে বইমেলার উদ্বোধনে। ছবি: শৌভিক দে।
কলকাতা বইমেলা বিশ্বের সেরা বইমেলা। এবং সেই বইমেলাকে ঘিরেই তাঁর লেখালেখি। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ভাবেই নিজেকে মেলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চ আর মুখ্যমন্ত্রীর বই প্রকাশের অনুষ্ঠান কার্যত একাকার। একযোগে সাতটি বই প্রকাশিত হল, মমতার। বীরভূমে প্রশাসনিক সভায় যাওয়ার আগে পর্যন্ত ঘাড় গুঁজে লিখেছেন। বুধবার সকালে শেষ কিস্তির লেখা ছাপতে দিয়ে তবে শান্তি প্রকাশকের! কিছুটা লাজুক সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বইমেলাকে কেন্দ্র করেই লিখি আমি। তাড়াহুড়োয়, ক্যাজ়ুয়ালি লেখা। প্রুফ দেখারও টাইম পাইনি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন।’’
ঠিক ক’টি বই বেরোচ্ছে তাঁর বা মোট ক’টি বই হল এত দিনে— তা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর নিজেরই খেয়াল ছিল না! নিজে বললেনও সে-কথা। বইয়ের সংখ্যা কি ৮০ ছাড়িয়ে গিয়েছে? সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ থেকে ধরতাই দিলেন, বইমেলার উদ্যোক্তা বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স
আরও পড়ুন: মমতার সহকারীর বাড়িতে সিবিআই
গিল্ডের দুই কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় এবং সুধাংশু দে। ৮৭টি হয়ে গিয়েছে! শুনে আত্মবিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘ঠিক আছে, তা হলে পরের বার আরও ১৩টি লিখে ফেলার চেষ্টা করব!’’
এক জন সুপরিচিত বিশিষ্ট লেখক হিসেবেই এ দিন মমতার পরিচয় দিলেন উদ্যোক্তারা। মমতা নিজেও বলেছেন, ‘‘আমার বেশ কয়েকটি বই বেস্টসেলার। লেখার রয়্যালটি, গানের সুর দিয়েই আমার চলে!’’ বিষয়বস্তু এবং ভাষা— দুইয়ের নিরিখেই লেখিকা মমতার ব্যাপ্তিও দুর্লভ। এ বারের সাতটি উপহার: ‘নামাঞ্জলি সমগ্র’, ছোটদের ছড়ার বই ‘শিশুদোলা’, কবিতার বই ‘আমি’, উর্দু শায়েরি ‘ইনসাফ’, ইংরেজি কবিতার বই ‘মাইসেল্ফ’, নিজের রাজনৈতিক যাত্রা নিয়ে একটি হিন্দি বই, এবং প্রবন্ধ সঙ্কলন ‘বিপন্ন ভারত’! শেষোক্ত বইটির প্রসঙ্গে মমতার মন্তব্য: ‘‘এ হল রাজনীতির বই, দেশের বই। তবে এ বার বেশি লিখতে পারিনি। পরে বড় করে লিখে দেব।’’
মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবির ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হল একই মঞ্চে। তা নিয়ে উচ্ছ্বাস মমতার: ‘‘তুলিতে নয়, পুরো টিউব ঢেলে এ-সব হ-য-ব-র-ল আঁকা! বুদ্ধি করে এঁকেছি।’’
তিনি লেখেন। তিনি আঁকেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার রাজনীতিক-সত্তাও আড়ালে থাকল না। একদা সাংবাদিক, বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক ‘রণাঙ্গনে মমতা’ একই মঞ্চে প্রকাশিত হল। মঞ্চে বক্তৃতায়, ভিড়ের নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম— ২২ লক্ষ লোকের বইমেলার কথা বলতে বলতেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তথা ‘হিংসুটেদের’ বাংলার উৎসব নিয়ে কটাক্ষের জবাব দিলেন মমতা। বললেন, ‘‘আমাদের দুর্গাপুজো অদ্বিতীয়। বড়দিনে সারা বিশ্ব আসে। ঘরে ঘরে কালী-সরস্বতী পুজো। পিঠেপুলি। সুভাষ মেলা থেকে ব্রিগেড মেলা আমাদের!’’
আদিম মায়া সভ্যতার ধারক-বাহক গুয়াতেমালার সাহিত্যিক এউদা মোরালেসকে ৪৩ বার হাতুড়ি পিটিয়ে ৪৩তম বইমেলার উদ্বোধনের আচার পালনে সহায়তা থেকে সব কিছুতেই মমতা। আবার ‘দুষ্টু এসে যেন মিষ্টিটা কাটতে না-পারে’ বলে সতর্কও করে দিয়েছেন প্রশাসনকে। ‘‘সব ভাল যার শেষ ভাল। বইমেলা হোক ঘরের আলো’’— ছড়া কেটেই বইমেলাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।