মগজ ধোলাই হয়েছে। এখন মগজের বিশ্রাম চাই!
তাই দিল্লির তালিম সেরে রাজ্যে ফিরে এসেও প্রশাসনিক কাজের ময়দানে পুরোপুরি নামতে পারছেন না ২০১৪ ব্যাচের ৮ জন আইএএস অফিসার। জেলায় গিয়ে মহকুমাশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার বদলে আগামী তিন মাস তাঁদের ঠিকানা রাজ্যের সচিবালয়, অর্থাৎ খাস নবান্ন। সূত্রের খবর: ওঁদের উপর থেকে গত তিন মাসের কেন্দ্রীয় ‘মগজ ধোলাইয়ের’ প্রভাব কাটাতেই সরকারের শীর্ষ মহলের এই সিদ্ধান্ত।
ঘটনা হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত অগস্টে মুসৌরির আইএএস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেই ওই নব্য আইএএসদের সরাসরি দিল্লি নিয়ে গিয়েছিলেন, তিন মাসের জন্য। শুধু বেঙ্গল ক্যাডার নয়, গোটা দেশ থেকেই নতুন আমলাদের বিভিন্ন মন্ত্রকে অবর সচিব হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। পিএমও’র যুক্তি ছিল— আইএএস হিসেবে আগামী দশ-বারো বছর ওঁদের জেলাস্তরে কাজ করতে হবে। তার পরে যাবেন রাজ্য বা কেন্দ্রের সচিবালয়ে। তাই একেবারে গোড়াতেই ওঁদের দেখিয়ে দেওয়া দরকার, কী ভাবে বিভিন্ন মন্ত্রকে কাজকর্ম চলে। এটা জানা থাকলে ভবিষ্যতে ওঁদের সুবিধে হবে বলে যুক্তি সাজিয়েছিল দিল্লি।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্যান্য রাজ্য প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এতে ঘোর আপত্তি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে রাজ্য ক্যাডারের অফিসারদের ফের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার স্রেফ একটাই উদ্দেশ্য— মগজ ধোলাই।
সেই মতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে দিল্লিকে আপত্তির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
রাজ্যের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর কেন্দ্রকে চিঠি লিখে বলে, এক বার ক্যাডার নির্বাচন হয়ে গেলে অফিসারেরা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে চলে আসেন। ওঁদের দিল্লিতে ডেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনও দরকার নেই। অবিলম্বে তাঁদের রাজ্যে ফেরানো হোক।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সে চিঠির উত্তর দেয়নি। দিল্লির তালিমের পালা চুকিয়েই আট অফিসারকে রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দিল্লি-কলকাতা দড়ি টানাটানির জেরে পিছিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসনের কাজে ওঁদের হাতেখড়ি। এক কর্তার কথায়, ‘‘এখনও ওঁদের গায়ে দিল্লির গন্ধ লেগে। ওঁরা আপাতত নবান্নে যোগ দিয়েছেন। মাস তিনেক বাদে মহকুমায় পাঠানো হবে।’’
এবং মগজকে ‘কিঞ্চিৎ বিশ্রাম’ দিয়ে তাঁরা যখন এ রাজ্যের প্রশাসনিক ময়দানে নামবেন, তখন তাঁদের উপরে দিল্লির প্রভাব আর থাকবে না বলে মনে করেন কর্তাদের একাংশ। যদিও নবান্নের এক মাথা এ সব তত্ত্ব নাকচ করে বলছেন, ‘‘এখন ভোটার তালিকা সংশোধন চলছে। এই ডামাডোলে নতুনদের পাঠানো হচ্ছে না। জানুয়ারিতে সংশোধন শেষ হলেই বদলির আদেশ বেরোবে।’’